অংশীদারত্বের রাজনীতিই গণতন্ত্রের চাবিকাঠি
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজের জন্ম ৩ এপ্রিল ১৯৫৮ সাল, ঢাকায়। তিনি ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পড়াশোনা শেষ করেন। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ইসলাম বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তার স্বীকৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি ২০১২ সালে ডক্টর রীয়াজকে ‘ইউনিভার্সিটি প্রফেসর’ পদে ভূষিত করে। বাংলাদেশের ৫০ বছরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অর্জন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের অগ্রসরতা এবং সীমাবদ্ধতাসহ আগামীতে এখানকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সম্ভাবনা নিয়ে দৈনিক বাংলার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অনিন্দ্য আরিফ
দৈনিক বাংলা: মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার নেপথ্যের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্র। যে পরিপ্রেক্ষিতেই আমাদের স্বাধীন দেশের সংবিধানে গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় জায়গা দেয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অর্জনগুলোকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
আলী রীয়াজ: প্রথমেই আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের দিকেই নজর দিতে পারি। এই ঘোষণাপত্রের আইনি এবং নৈতিক ভিত্তি হচ্ছে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন, জনগণের ম্যান্ডেট এবং জনগণের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি। এগুলো হচ্ছে গণতন্ত্রের ভিত্তি। এর সঙ্গে আছে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা, আইনের শাসন এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা। বাংলাদেশের গত ৫০ বছরের ইতিহাসে এই বিষয়গুলো বারবার উপেক্ষিত হয়ে আসছে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্জন সীমিত, বারবার এর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্র ১৯৯০-এর পরে এই পথে যতটা অগ্রসর হয়েছিল দুর্ভাগ্য হচ্ছে, গত দেড় দশকে তা থেকে কেবল সরে এসেছে তা নয়, পেছনের দিকে যাত্রা করেছে।
দৈনিক বাংলা: ১৯৭৫-এর শোকাবহ পটপরিবর্তনের পর থেকে দীর্ঘদিনের সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯০-এর পর নির্বাচনী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
আলী রীয়াজ: বাংলাদেশের সূচনালগ্নে গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি ছিল, চর্চাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে একদলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা তার অবসান ঘটাল। সেই অধ্যায়ের অবসান হলো অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে। শোকাবহ বললে ১৯৭৫ সালের ঘটনা প্রবাহের তাৎপর্য এবং প্রভাব পুরোটা বোঝা যায় না। এতে করে সেনাশাসনের সূচনাই হলো তা নয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের গতিপথও বদলে গেল। ১৯৯০ সালে গণতন্ত্রায়নের পথে যাত্রার সূচনায় নির্বাচনী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলো, এটা ইতিবাচক অগ্রগতি। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলার উদ্যোগ থাকল না। উপরন্তু সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী সাংবিধানিকভাবেই প্রধানমন্ত্রীর শাসনের, এক ব্যক্তির শাসনের পথ উন্মুক্ত করল। সাংবিধানিক এই ব্যবস্থার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চার বদলে অসহিষ্ণুতা বাড়ল, প্রতিষ্ঠানকে দলের স্বার্থে ব্যবহার করার ধারা শক্তিশালী করা হলো। এ সময় কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে একটা রক্ষাকবচ ছিল- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন। এই ব্যবস্থার অবসান গণতন্ত্রের শেষ রক্ষাকবচটিকেই অপসারণ করেছে।
দৈনিক বাংলা: স্বাধীনতার পর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে দীপালি-কাঞ্চন-জয়নাল, রাইফুন বসুনিয়া, নূর হোসেন, ডা. মিলনের মতো অসংখ্য মানুষের সাহসী বলিদান কি এখানকার মানুষের গণতন্ত্রের জন্য আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে না?
আলী রীয়াজ: তাদের আত্মদানের গুরুত্ব অপরিসীম। এরা বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। কিন্তু গত ৫০ বছরে গণতন্ত্রের জন্য আরও অনেক আত্মদান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা কেবল আন্দোলনের মধ্যেই প্রকাশিত তা কিন্তু নয়, যখনই সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে মানুষ তাতে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছে। নাগরিকদের যে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করার একটা প্রবণতা ছিল সেটাও কিন্তু এই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। নাগরিকরা যেকোনোভাবেই হোক রাজনীতিতে, শাসনব্যবস্থায় অংশ নিতে চান, ক্ষমতাসীনদের প্রশ্ন করতে চান- এটাই তো গণতন্ত্রের মূলকথা।
দৈনিক বাংলা: সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সমাজবাদী গণতন্ত্র এবং উদারনৈতিক গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে জনতুষ্টিমূলক কর্তৃত্ববাদের ঢেউ উঠছে। সেখানে আমাদের এখানকার গণতন্ত্রকে কীভাবে সবল রেখে চালিয়ে নেয়া যায়?
আলী রীয়াজ: জনতুষ্টিবাদী কর্তৃত্ববাদের ঢেউ থেকে দক্ষিণ এশিয়া মুক্ত নয়, বাংলাদেশও নয়। আপনি বলছেন ‘গণতন্ত্রকে সবল রেখে চালিয়ে নেয়ার’ কথা। এখন যে শাসন দেখছি তাকে সবল করা বা এগিয়ে নেয়ার কারণ দেখি না। দুটো নির্বাচন হয়েছে ভোটারদের প্রায় অংশগ্রহণ ছাড়া, এমন সব আইন চালু করা হয়েছে, যা মানুষের বাকস্বাধীনতা প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে, সমাবেশের অধিকার কেবল সরকারের ইচ্ছার ওপরে নির্ভরশীল, আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে জনগণের অধিকার এবং গণতন্ত্রের পথে পুনর্যাত্রার জন্য এখন দরকার অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি ও অবাধ নির্বাচনের বিষয়ে জোর দেয়া। এর আর কোনো বিকল্প নেই।
দৈনিক বাংলা: গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন কি একই পথরেখা দিয়ে অগ্রসর হতে পারে?
আলী রীয়াজ: অবশ্যই চলতে পারে। শুধু পারে তা নয়, সেটাই হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত। উন্নয়ন মানে হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, কল্যাণ নিশ্চিত করা। প্রত্যেককে তার ভাগ্য নির্ধারণের পথ উন্মুক্ত করে দেয়া, তার সম্ভাবনার বাস্তবায়নের পথে বাধাগুলো সরিয়ে দেয়া। আর তা করতে হবে নাগরিকের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। সেটাই তো গণতন্ত্র। ফলে গণতন্ত্র বাদ দিয়ে যা তা উন্নয়ন নয়, প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড় জোর, তার সুবিধা পাবে সীমিত সংখ্যক মানুষ। এই দুটোকে পরস্পরের মুখোমুখি করা হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যৌক্তিকতা তৈরি করা। ফলে যারা আকারে-ইঙ্গিতে বা সরাসরি বলেন গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন একরেখায় চলে না তারা আসলে গণতন্ত্র চান না।
দৈনিক বাংলা: দেশে গণতন্ত্র নিশ্চিত করে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোর কেমন ভূমিকা থাকা প্রয়োজন?
আলী রীয়াজ: যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ই দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, রাজনৈতিক দল বাদ দিয়ে তো গণতন্ত্র হয় না। সেই ভূমিকা পালন করতে দলকে কেবল ব্যক্তির অনুসারী হলে হবে না, তাকে হয়ে উঠতে হবে আদর্শের প্রতিনিধি এবং গণতন্ত্রের প্রতি নিবেদিত। দলকেও গণতন্ত্র চর্চা করতে হয়। ক্ষমতায় যাওয়া দলের লক্ষ্য। কিন্তু তাকে বিবেচনা করতে হবে সে বিরোধী দল হলে ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে কী আচরণ আশা করত; ক্ষমতাসীন দল হিসেবে তাকে সেই আচরণ করতে হবে। মনে রাখা দরকার, গণতন্ত্র মানে সংখ্যাগুরুর নিপীড়ন নয়, সংখ্যালঘুর নিরাপত্তার রক্ষাকবচ। দল কেবল সীমিত সময়ের জন্য দায়িত্ব পালনের ম্যান্ডেট পেতে পারে। নির্বাচনী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে একটি শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহিমূলক শাসনের প্রথম ধাপ। জবাবদিহিতা কেবল নির্বাচনের মধ্যেই সীমিত নয়, কিন্তু নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি দায়িত্ব পালন না করে তবে একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে না। এটাও মনে রাখা দরকার যে, নির্বাচনী প্রতিষ্ঠাগুলো জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, তাদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।
দৈনিক বাংলা: গণমাধ্যমের ভূমিকা কেমন থাকতে পারে?
আলী রীয়াজ: গণমাধ্যম হচ্ছে সিভিল সোসাইটির অংশ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে সিভিল সোসাইটি। যারা নাগরিকদের স্বার্থ এবং ইচ্ছাকে প্রতিনিধিত্ব করে, রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর প্রভাবের বাইরে থাকে সেই সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত রূপই হলো সিভিল সোসাইটি। সিভিল সোসাইটির কাজ হচ্ছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা- রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য ক্ষমতাশালীদের। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণমাধ্যমের কাজ হচ্ছে আনুভূমিক বা হরাইজেন্টাল জবাবদিহিতার কাজ করা। যেখানে গণতন্ত্র দুর্বল বা অনুপস্থিত সেখানে গণমাধ্যমের এই ভূমিকা আরও বেশি করে পালন করার দরকার হয়ে পড়ে।
দৈনিক বাংলা: আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করছেন। সেখান থেকে এই অঞ্চল এবং আমাদের দেশের গণতন্ত্র নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী বলছে?
আলী রীয়াজ: আমি আগেই যেটা বলেছি তা হলো, দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা গণতন্ত্রের আশানুরূপ বিকাশ দেখতে পাচ্ছি না। এই অঞ্চলে ভারতকে একটা শক্তিশালী গণতন্ত্র বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে তার ব্যাপক ক্ষয় দৃশ্যমান হয়েছে, নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। শ্রীলঙ্কায় কার্যত একটি পরিবারের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, একটা বড় ধরনের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজাপক্ষের পরিবার আপাতত ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্রের পথযাত্রা মসৃণ হয়েছে এমন বলার সময় আসেনি। পাকিস্তানে গণতন্ত্রের যাত্রা দীর্ঘদিন ধরেই বারবার হোঁচট খাচ্ছে, একভাবে তাতে অগ্রগতিও হচ্ছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পশ্চাৎযাত্রা সহজেই দৃশ্যমান। কিন্তু তা সত্ত্বেও যেটা আশার বিষয় সেটা হচ্ছে- পাকিস্তান-ভারত-শ্রীলঙ্কা সব জায়গায়ই জনগণের মধ্যে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা আছে, একই ধরনের আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও আছে। এসব দেশে অনেক রাজনৈতিক দল সেই আকাঙ্ক্ষার পক্ষে লড়ছেন, সিভিল সোসাইটির প্রতিরোধ আছে। ফলে আমি এখনও আশা করি বৈশ্বিকভাবে এবং এ অঞ্চলে এই অবস্থার অবসান হবে।
দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কেমন হারে বৃদ্ধি পেয়েছে? সেখান থেকে আমাদের আশাবাদের কেমন জায়গা রয়েছে?
আলী রীয়াজ: গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বলতে যদি আপনি পরমতসহিষ্ণুতা, সকলের সমতার প্রতি অঙ্গীকার বোঝেন তবে বলতে হবে সেটা খুব বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে না। কিন্তু সমাজে এই ধারণাগুলো বিকশিত হয় প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়ে, রাষ্ট্রের আচরণের মধ্য দিয়ে। সেখানে যেহেতু ব্যত্যয় ঘটছে, যেহেতু ক্ষমতাসীনরাই এক ধরনের বিভাজনকে উস্কে দিচ্ছেন, আইনের সমান প্রয়োগ করছেন না, সেহেতু এই মূল্যবোধ বিকাশের জায়গাটা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। আবার একই ধরনের মনোভাব যারা ক্ষমতার বাইরে আছেন তাদের ভেতরেও দেখতে পাই। তাদের মতকে চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করা এটাও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য ইতিবাচক নয়। আশার জায়গা হচ্ছে, এগুলো অপরিবর্তনীয় নয়। রাজনীতি এবং শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা তৈরি করা গেলে এই ধারাটা বদলানো সম্ভব। কেননা বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ হচ্ছে অংশীদারত্বের।
দৈনিক বাংলা: আমাদের জনসংখ্যার বড় জায়গায় তরুণরা রয়েছে। এই তারুণ্যের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা কতটুকু? তাদের জন্য গণতন্ত্র কি সমৃদ্ধ আশাবাদের জায়গা তৈরি করতে পারে?
আলী রীয়াজ: সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যার ২৭ দশমিক ৮২ শতাংশই তরুণ। সংখ্যায় সাড়ে চার কোটির বেশি। এই যে তরুণ নাগরিক গোষ্ঠী তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের প্রতি আস্থার কোনো সংকট নেই। এখন পর্যন্ত আমি এমন কোনো জরিপ দেখিনি যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণ বলছেন যে, তারা গণতন্ত্রের কোনো বিকল্পকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন। ২০১১ সালে ব্র্যাকের করা একটি জরিপ, ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষে থেকে করা ইয়ুথ পারসেপশন সার্ভে, ২০১৫ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিলের করা জরিপ, ২০১৮ সালের ব্র্যাকের করা জরিপের কোথাও কিন্তু আমি দেখছি না যে, তারা গণতন্ত্রের বিকল্প চান। যা দেখা যাচ্ছে তারা প্রচলিত রাজনীতির ব্যাপারে আস্থাশীল নন, কিন্তু তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। দেশের নীতিনির্ধারক এবং রাজনীতিবিদদের কাজ হচ্ছে এই আশাবাদকে কাজে লাগানোর পথ বের করা- তাদের রাজনীতিবিমুখ না করে রাজনীতিতে তাদের যুক্ত করা। সেটার জন্য দরকার সুস্থ গণতন্ত্র, দরকার অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা।
দৈনিক বাংলা: আগামীতে এই তরুণদের সামনে যে বাংলাদেশ হাজির হবে, সে সময়ে তাদের কাছে গণতন্ত্রের কী কী সম্ভাবনা হাজির করা যেতে পারে? আমাদের অর্থনীতি এখন যে জায়গায় পৌঁছানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে, সেই সম্ভাব্য উন্নত সময়ে কোনো পর্যায়ের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে?
আলী রীয়াজ: আগামীতে যে বাংলাদেশ তৈরি হবে সেটা তো তরুণরাই তৈরি করবেন। সেই বাংলাদেশ তো একটি দলের, একটি গোষ্ঠীর, একটি আদর্শের অনুসারীদের বাংলাদেশ হতে পারে না। কাউকে বাদ দিয়ে তো আগামীর বাংলাদেশ নয়। অর্থনীতির যে সম্ভাবনার কথা আপনি ইঙ্গিত করছেন সেখানে তরুণদের জন্য কী ধরনের সম্ভাবনা তৈরি করা হচ্ছে সেটা ভাবা দরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ২০১৬ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বলছে, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার বেশি। বিআইডিএসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই বেকারের হার বেশি। ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার। এরাই তরুণ সমাজ। দেশে প্রতি বছর যে ২০ লাখ মানুষ শ্রমশক্তিতে যোগ দেন তারাই তরুণ। তাদের বড় অংশের জন্য কাজের ব্যবস্থা হচ্ছে না। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে অর্জন করতে হলে, তরুণদের অংশগ্রহণের জায়গাটি নিশ্চিত করতে হলে গণতন্ত্র দরকার, অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দরকার।
অর্থনীতির যে সম্ভাবনার কথা আপনি ইঙ্গিত করছেন সেখানে তরুণদের জন্য কী ধরনের সম্ভাবনা তৈরি করা হচ্ছে সেটা ভাবা দরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ২০১৬ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বলছে, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার বেশি। বিআইডিএসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই বেকারের হার বেশি। ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার। এরাই তরুণসমাজ। দেশে প্রতিবছর যে ২০ লাখ মানুষ শ্রমশক্তিতে যোগ দেন তারাই তরুণ। তাদের বড় অংশের জন্য কাজের ব্যবস্থা হচ্ছে না। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে অর্জন করতে হলে, তরুণদের অংশগ্রহণের জায়গাটি নিশ্চিত করতে হলে গণতন্ত্র দরকার, অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দরকার
News Courtesy:
https://www.dainikbangla.com.bd/feature/2592