প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ: আলী রীয়াজ
একটা স্বৈরাচারী সরকারের পতন সাধারণত যেভাবে হয় শেখ হাসিনার পতন ঠিক সেভাবেই হয়েছে৷ অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে এবং খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে এটা ধসে পড়েছে৷ কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বৈরাচারী সরকারগুলোর পতন এভাবেই হয়ে থাকে৷
দুঃখজনক হলো এই পতনের পথ তৈরি করতে গিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে আমরা দেখতে পেলাম অসংখ্য প্রাণহানি৷ আমরা দেখতে পেলাম সামগ্রিকভাবে গোটা দেশের জন্য যত ক্ষতিকর কাজ করা যায় সেটা সম্পাদন করেই শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করলেন৷ এটার মধ্য দিয়ে যেটা হলো শুধু যে শেখ হাসিনার পদচ্যুতি ঘটলো, তার ক্ষমতা থেকে তাকে অপসারিত হলো তা-ই নয় আমি এটাকে দেখি যে, একটা নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ কারণ, অন্যান্য সময়ে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সাধারণত ক্ষমতার এই পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ কিন্তু এক্ষেত্রে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটেছে৷ এখন সেই রাজনৈতিক শক্তিকে কীভাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা তার সঙ্গে যুক্ত করা যাবে, তা সবচেয়ে বড় ও প্রধান প্রশ্ন৷ কেননা, এই যে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে সেই সরকারের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে আন্দোলন৷ যে আন্দোলনের মধ্যে নতুন শক্তিটা আছে৷ আবার আপনি রাজনৈতিক শক্তিকে বাদ দিয়েও সরকার গঠন বা প্রশাসন চালাতে পারবেন না৷ সেটা হচ্ছে আসলে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ৷ আরেকটা চ্যালেঞ্জ যেটা সেটা হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি৷ এবং এই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করা, জনগণকে সাথে নিয়েই করতে হবে৷ কেননা পুলিশ এবং অন্যান্য বাহিনীগুলো গত ১৪ বছরে যেই গণবিরোধী ভূমিকা পালন করেছে, তাদেরকে দিয়ে আপনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলে এক ধরণের উত্তেজনা সৃষ্টি হবে, সেটা খুব ভালো হবে না৷ ফলে যত দ্রুত সম্ভব সকলের অংশগ্রহণে এবং প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ সামনে আরও বড় বড় সংকট মোকাবেলা করতে হবে৷ তার জন্য এই সরকারের সেই প্রচেষ্টাটা থাকা দরকার৷
সেনাপ্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আমি বিস্মিত ও খানিকটা হতাশ হয়েছি৷ শেখ হাসিনা সরকারের পতনটা হয়েছে একটা গণঅভ্যুথান এর মধ্য দিয়ে এবং সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে এই রাজনৈতিক শক্তিকে সহায়তা করা৷ অন্যদিকে তিনি বলছেন যে সেনাবাহিনীকে যেন সকলে সহযোগিতা করে৷ সেটা থেকে মনে হয় যেন, এই ট্রানজিশন এর সময়টা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি৷ কিন্তু তা আসলে হওয়ার কথা না৷ এই যে বড় বড় আত্মদান এবং যেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পতনটা ঘটেছে স্বৈরাচারী সরকারের, তাতে যে শক্তি, তাকে সহযোগিতা করার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর৷ সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার দায়িত্ব এটা হতে পারে না৷ শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেটা আমার কাছে আপত্তিকর বলেই মনে হয়েছে৷ আপনারা এখন ঘরে ফিরে যান৷ এটা যথোপযুক্ত নয়৷ কেননা তারা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে সংগ্রাম করে, প্রস্তুতি নিয়ে যেই পরিবর্তনটা আনলেন, তারপরে তাদেরকে বাড়ি চলে যেতে বলা, তাদেরকে এই প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখার চেষ্টা বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে৷ ফলে এটা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত, সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ট্রানজিশন যেন না হয়৷
আলী রীয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো
News Courtesy: