‘সংবিধান পরিবর্তন করে ফ্যাসিবাদ ফেরার পথ সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয়’

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক, আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র অনাবাসিক ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের (এআইবিএস) প্রেসিডেন্ট তিনি। যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। সম্প্রতি সংবিধান সংস্কারসহ চলমান রাজনীতির নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম ও আনিকা মাহজাবিন
এখন পর্যন্ত সংবিধানে ১৭ বার সংশোধনী আনা হয়েছে। এর পরও বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয় বরং ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ কী?
সংবিধানে সংশোধনীগুলোর বড় অংশই হয়েছে বাংলাদেশের শাসন কাঠামোকে আরো এককেন্দ্রিক ক্ষমতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কতগুলো সংশোধনীতে আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও মূল সংশোধনীর মাধ্যমে ক্ষমতাকে এককেন্দ্রিক করা হয়েছে। এখানে দুইবার ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র, সেনাশাসন ও একদলীয় ব্যবস্থা দেখেছি। ক্ষমতাকে এককেন্দ্রিক করার বিষয়টি সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই ছিল।
বাহাত্তর সালের তৈরি হওয়া সংবিধান যতটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সে অনুযায়ী সাংগঠনিকভাবে কাঠামোর দিক থেকে ক্ষমতার ভাগ-বণ্টনটি হয়নি। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের কোনো পথ রাখা হয়নি, যা এখনো নেই। এর পাশাপাশি ১৯৭১ সালের মূলনীতির বিবেচনায় মূল বিষয়গুলো ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার। কিন্তু তা বাহাত্তর সালের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেননি। যেখানে এটিই ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি। এ কাঠামোই ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ করেছে, যার জন্য ইতিহাসের এ জায়গায় আমরা দাঁড়িয়েছি।
সংবিধানে চারটি মূলনীতির কথা যুক্ত হয়েছিল, যা আপনি বলছেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সেক্ষেত্রে একটি দলের মূলনীতি সংবিধানের মূলনীতি হয়ে যাওয়া কি ফ্যাসিবাদ সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে?
এগুলো তো রাজনৈতিক আদর্শ। যেগুলো প্রধানত একটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭২ সালের শুরুর মাসগুলোয় তারা (আওয়ামী লীগ) বলেছেন এগুলো বাংলাদেশের আদর্শ হবে। সংবিধান প্রণয়ন কিন্তু তখনো শেষ হয়নি। তার মানে একটি রাজনৈতিক দল নির্ধারণ করছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে আদর্শ কী হবে। সেক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে আদর্শের কথা ছিল সেগুলো থাকছে না। বাঙালি জাতীয়তাবাদের মধ্য দিয়ে প্রায় সব জাতিগোষ্ঠীকে প্রতীকী অর্থে নিশ্চিহ্ন বা অস্বীকার করে দেয়া হয়।
এর পাশাপাশি সংশোধনীগুলোর মধ্যে চতুর্থ সংশোধনীতে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বদলে একদলীয় ব্যবস্থা করা হলো। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের এ ম্যান্ডেট কিন্তু আওয়ামী লীগের ছিল না। এভাবে আদর্শের দিক থেকে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হলো। ফলে একনায়কের শাসন প্রতিষ্ঠা হলো। ফ্যাসিবাদের জন্য বিষয়টি এক ধরনের আদর্শিক অবস্থান তৈরি করেছে, যেটিকে আমরা মুজিববাদ বলব। সেই মুজিববাদই তৈরি করেছে এক নেতা, এক দেশ। কবে তৈরি হয়েছে? ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালে। বিশেষ করে ১৯৭৩ সালে। আমরা সেটি আবার ২০০৯ সালে পুনরায় দেখতে পাই। ‘এক নেতা এক দেশ; বিকল্প নেই’। আদর্শের যে জায়গা থেকে এগুলো করা হয়েছে, সে জায়গায় প্রশ্নগুলো রাখা দরকার।
সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে রাখার বিষয়টি কি আমাদের মেজরিটারিয়ানিজমের দিকে নিয়ে যেতে পারে?
বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যুক্ত হয়েছে ১৯৮৮ সালে, যা এখনো বিদ্যমান। তারপর থেকে অনেক সরকার এল। কিন্তু কেউই তা বদল করেননি। তার কারণ কী? আমি মনে করি তার কারণ হলো রাজনৈতিক বাস্তবতা। আমরা যখন অনলাইনে সংবিধান নিয়ে মতামত আহ্বান করেছি, তখন বিশালসংখ্যক মানুষ এটা রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন তুলতেই পারেন, লোকে চাইলেই কী তা রাখতে হবে? কিন্তু আমরা কী একটি জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশের চাহিদাকে উপেক্ষা করে সংবিধান করতে পারি? আমাদের মনে এ ভাবনাই ছিল। রাষ্ট্রধর্ম রাখা না রাখা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক ভিন্নমত ছিল, বিতর্ক হয়েছে, কিন্তু বড় একটা অংশই তা রাখার পক্ষে ছিলেন।
আমাদের বিদ্যমান সংবিধানের বড় দুর্বলতা ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। প্রস্তাবিত সংবিধানে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী নিরাপদ ও সমতা অনুভব করবে বলে মনে করেন?
প্রথমত, বাংলাদেশের সংবিধানে আমাদের জাতি হিসেবে বাঙালি বলে পরিগণিত করা হয়। এটি তুলে দিতে বলেছি। নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশী পরিচয় এখনো আছে। আমরা বহুত্ববাদের কথা বলেছি। বহুত্ববাদ যে কেবল ধর্মীয়ভাবে মতপার্থক্য, ভিন্নমত বা ভিন্ন অবস্থার সহনশীলতা তৈরি করবে, তা নয়। সাংস্কৃতিকভাবে যে বৈচিত্র্য রয়েছে অর্থাৎ চাকমা, মারমা ও অবাঙালিদের বহুত্ববাদও অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। অন্যভাবে যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে; যিনি দলিত সম্প্রদায় তাকেও সমতার মর্যাদা দেবে। কিন্তু তাকে সমতার মর্যাদা দেয়া হয়নি। তৃতীয় লিঙ্গকেও রাষ্ট্র সমান মর্যাদা দেবে। সমতার ধারণাকে বড় করতে হবে এবং সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিদের এক বা একাধিক দেশে নাগরিকত্ব রয়েছে। এমনকি তারা অর্থ পাচার ও অর্থ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের নাগরিকত্বকে কীভাবে টেকসই করা যায়?
নাগরিকত্ব নিয়ে কোনো প্রস্তাব দেইনি। বিদ্যমান সংবিধানেও এ বিষয়ে কিছু নেই। অর্থ পাচার ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে আইনের শাসন না থাকায়। কেবল দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার কারণে অর্থ পাচার হয়েছে? না। হয়তো সুবিধা পেয়েছে। এটি তদন্তের বিষয়। বর্তমানে প্রায় ১২-১৪ মিলিয়ন মানুষ দেশের বাইরে থাকছে। একটি অংশ অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তারা অবদান রাখছে। আমরা যখন দ্বৈত নাগরিকত্বের কথা ভাবব, তখন তাদের অবদানের কথাও ভাবতে হবে। যখন স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়, তখন রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নামল। কারণ বিদেশ থেকে সবাই রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দিলেন।
আমাদের বিপুল পরিমাণে প্রবাসী কর্মী রয়েছেন। কিন্তু তারা রাজনৈতিকভাবে তেমন একটা উচ্চকণ্ঠ নন। তারা ভোট দিতে পারেন না। তাদের নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?
আমাদের সংবিধানে এটা ছিল না। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রবাসী নাগরিকদের ভোট প্রদানের বিষয়টি প্রস্তাব করেছে এবং আমি মনে করি এটি যথার্থ। যেমন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা যেখানেই বাস করুক না কেন, তাদের ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক। কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যদি দেশের বাইরেও থাকেন, তাদের দূতাবাসে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। সুতরাং প্রবাসীদের জন্য ভোটদানের ব্যবস্থা করা একেবারেই অসম্ভব কাজ নয়। আমি সর্বান্তঃকরণে এই প্রস্তাব সমর্থন করি।
বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ বাইরে আছেন। তারা উদয়াস্ত পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেন এবং তাদের আয় দেশে পাঠান। তাহলে তাদের ভোটাধিকার কেন থাকবে না? তাদেরকে এ অধিকার প্রদান করতে হবে।
নব্বইয়ের অভ্যুত্থানের পর কিছু বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং তা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু সেগুলোর প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যায়নি। বর্তমান সংবিধান সংস্কার কমিশন ভবিষ্যতে কেন ফ্যাসিবাদ রুখতে পারবে বলে মনে করছেন?
প্রথমত, আমাদের পক্ষ থেকে সংবিধানে যে সংস্কারগুলো করার প্রস্তাব করা হয়েছে তার প্রধান লক্ষ্য হলো ক্ষমতার এককেন্দ্রিকীকরণ রুখে দেয়া। যেটাকে ফ্যাসিবাদ বা ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র বলা হচ্ছে। এই স্বৈরতন্ত্র গড়ে ওঠে যখন ক্ষমতা একক ব্যক্তির হাতে থাকে, প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। তাহলে ফ্যাসিবাদ রুখতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে হবে এবং ক্ষমতা এমনভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে যাতে ক্ষমতা কোনো একক ব্যক্তির হাতে না থাকে। আমরা সেই প্রস্তাবগুলোই করেছি।
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় যে তিন জোট তৈরি হয়েছিল, তাদের মধ্যে কিছু বিষয়ের ঐকমত্য গড়ে উঠলেও শেষ পর্যন্ত তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ভাগ হয়ে যাওয়ায় স্বৈরতন্ত্র পুনরায় ফিরে আসতে পেরেছে। আমরা এরই মধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তবে সংবিধান পরিবর্তন করে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার পথ সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ আবশ্যক।
এছাড়া আমরা জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের প্রস্তাব করেছি। সেখানে রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি, সরকার ও বিরোধী দলের নেতা ও স্পিকার থাকবেন এবং এ দুই দলের বাইরে সংসদ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকবেন। আমরা সংসদের কমিটিগুলো শক্তিশালী করতে কাজ করব এবং বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের নিয়োগ দেয়া হবে এখান থেকে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে কাজ করা হবে। এজন্য পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি হবে বিরোধী দল থেকে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার কথা আমরা বলছি। প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারলে সম্ভব বলে আমরা আশাবাদী।
প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর স্বার্থে যেসব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার ও আপনারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে না, সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন কী?
আমরা এভাবে বিবেচনা করছি না। বাস্তবায়নের কাজটি করবে অন্তর্বর্তী সরকার এবং এ সরকারের ছয়টি কমিশন। কিন্তু ঐকমত্য নেই আবার প্রতিষ্ঠানও করা দরকার, তখন কী করব? আমি আশাবাদী। সংবিধান সংস্কার কমিশনের অনুরোধে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যে প্রস্তাবগুলো পেয়েছি সেগুলোর বড় রকমের প্রতিফলন আমাদের সুপারিশের মধ্যে আছে। একটি উদাহরণ হলো আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট সুপারিশ করেছি। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং অংশীজনরা তাই বলেছেন। অংশীজনের ধারণা আমরা পাই এভাবে যে ৫০ হাজার লোক আমাদের মত দিয়েছেন। কেউ একবাক্যে দিয়েছেন কেউবা পুরো একটি সংবিধান লিখে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া ৪৬ হাজার খানায় জরিপ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা ব্যাপক আলোচনার মধ্য দিয়ে গিয়েছি।
ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্র ক্ষমতায়ও ছাত্র উপদেষ্টারা রয়েছেন। এভাবে রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে স্টেট অ্যাপারেটাস (রাষ্ট্রযন্ত্র) ব্যবহার হতে পারে?
বাংলাদেশে স্টেট অ্যাপারেটাস ব্যবহার করে গঠিত প্রথম দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)। রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে দল গঠনের কথা বলতে গেলে মানুষ প্রথমে বিএনপির নাম বলে। তারপর বলে জাতীয় পার্টির নাম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হলো বাকশাল, যেখানে আওয়ামী লীগ তার নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়ে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে একদলীয় ব্যবস্থা করেছে, যেখানে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। সেটিই হলো ইতিহাস।
কিন্তু আপনি যে কনটেক্সটে বলছেন সেটি হাইপোথেটিক্যাল। তারা কী করে তা দেখার জন্য আমি অপেক্ষা করব। তবে এক্ষেত্রে আমার অবস্থানটি হলো আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি (কমিশনের অবস্থান নয়) রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দল গঠন করা সঠিক নয়। এখন ধরুন উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বেরিয়ে আসবেন কিনা। বেরিয়ে এলে নাগরিক হিসেবে তো রাজনৈতিক দল করার অধিকার তাদের রয়েছে। এটি এক ধরনের হাইপোথেটিক্যাল অবস্থানের মধ্যে আমরা কথা বলছি। আমি অপেক্ষা করে দেখতে চাই কী দাঁড়ায়।
নতুন সংবিধান নাকি সংবিধান সংস্কার হবে? এছাড়া গণপরিষদের মধ্য দিয়ে এটি করা হবে নাকি পরবর্তী সংসদকে গণপরিষদ করা হবে এ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে কমিশন কীভাবে দেখছে?
কমিশন এ বিষয়গুলো দেখে না। আমাদের ‘টার্মস অব রেফারেন্সের’ মধ্যে এগুলো ছিল না। আমাদের টার্মস অব রেফারেন্সে ছিল সুপারিশ করা। তাই করেছি। এখন রাজনৈতিক দলগুলো বিবেচনা করে পথ বের করবে। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো অবস্থান নেই।
আইন-শৃঙ্খলাসহ অন্যান্য বেশকিছু ক্ষেত্রে এ সরকার এখনো পুরো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। একই সঙ্গে রয়েছে কিছু উপদেষ্টাকে নিয়ে সমালোচনা। এমন পরিস্থিতিতে এ সরকার সংবিধান সংস্কারের এ প্রস্তাবগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন করতে সক্ষম বলে আপনি মনে করেন?
আপনি অন্তর্বর্তী সরকারের যে সমালোচনাগুলো করলেন, সেগুলোকে সঠিক সমালোচনা বলে আমি মনে করি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা দুর্বলতা দেখেছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে খুব বেশি সফলতা দেখছি না। এর কারণ হিসেবে বলতে পারি দীর্ঘদিনে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে; যেমন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিকীকরণ ও দলীয়করণ হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, কারণ অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সংশ্লিষ্টতা। অবশ্যই আরো সাফল্যের প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
তবে এ সরকার যে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবে, সেগুলো প্রশাসনিকভাবে করা যায়। বড় সংস্কার যেগুলো তা তো এ সরকারের একার করার কথা না। আমরা কেন ধরে নিচ্ছি এ সরকারকে সংস্কার করে দিয়ে চলে যেতে হবে। আমি বারংবার বলি তারা দায়িত্বে আছেন; ক্ষমতায় নেই। বিশেষ পরিস্থিতিতে তারা দায়িত্ব নিয়েছেন। এগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রয়োজনীয়তা। বাংলাদেশে সংস্কারের কথা রাজনীতিবিদরাই গত কয়েক বছর ধরে বলছেন। চলুন আমরা এভাবে বিবেচনা করি যে এ সরকার কী সংস্কার শেষ করে যেতে পারবেন? এ প্রশ্ন না বলে বলি—রাজনৈতিক দলগুলো কিছু সংস্কার শুরু করে কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হতে পারবে? সেটিই বর! জরুরি প্রশ্ন।
তাহলে কতটুকু সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
সরকার একা নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নির্ধারণ করতে হবে, কতটুকু সংস্কার এখন করা যাবে। আর কতটুকু মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে করা যাবে। সবকিছু অবিশ্বাস্য গতিতে এগোবে; তিন মাস-ছয় মাস করে রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দেবে, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো করবে কী? জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন করে রাজনীতিবিদরা এমন সংস্কার করবেন যেন মানুষকে আর প্রাণ দিতে না হয়। তাদের অধিকার ফেরত পান ও একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা তৈরি হয়। তাই কতটুকু সংস্কার করবে, সবই আলোচনা করে নির্ধারণ করতে হবে।
News Courtesy:
Bonik Barta | February 7, 2025