ঐকমত্য কমিশনের কারণে নির্বাচন বিলম্বের সুযোগই নেই

অধ্যাপক আলী রীয়াজ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি। ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান। বর্তমানে তিনি সংস্কারের জন্য গঠিত ছয়টি কমিশনের সুপারিশ নিয়ে কাজ করছেন। কমিশনের কাছ থেকে কয়েকশ প্রস্তাব পেয়েছেন। এসব প্রস্তাব থেকে ১৬৬ প্রস্তাব বাছাই করা হয়েছে। সেই প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আলোচনার প্রাথমিক ধাপ শেষ হয়েছে। শিগগিরই দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করবেন। অনেকে বলছেন, সংস্কারে ঐক্য না করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন পেছানোর ব্যাপারে ঐক্য করার চেষ্টা করতে পারে ঐকমত্য কমিশন। এ ব্যাপারে অধ্যাপক আলী রীয়াজের স্পষ্ট বক্তব্য হলো- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজের কারণে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। এ ছাড়া দৈনিক আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপে আরও অনেক বিষয় স্পষ্ট করেছেন তিনি। আলী রীয়াজের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক আমাদের সময়ের কূটনৈতিক প্রতিবেদক আরিফুজ্জামান মামুন
Pause
Mute
Remaining Time -13:48
Close PlayerUnibots.com
আমাদের সময় : সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ প্রধান খাত বা প্রতিষ্ঠানের জন্য কমিশনের সংস্কার সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছিল। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ছিলেন আপনি। এখন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হয়ে মূল দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ঐকমত্য কমিশনের মূল লক্ষ্য কী?
আলী রীয়াজ : আমাদের মূল লক্ষ্য ৬টি সংস্কার কমিশন, বিশেষ করে পাঁচটি কমিশনের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব ও সুপারিশগুলো করা হয়েছে, তার মধ্য থেকে নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাবের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এক ধরনের ঐকমত্য তৈরি করা যে, সংস্কার প্রস্তাবে তারা একমত হচ্ছেন।
আমরা চেষ্টা করছি, সংস্কার কাজগুলো বিশেষ করে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত যে প্রস্তাবগুলো এসেছে এবং কোন জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলো একমত হচ্ছে, তার ভিত্তিতে একটি সনদ তৈরি করা। যে সনদটি হবে ভিত্তি। যেটি হবে বাংলাদেশের রাজনীতির একটা পথরেখা। যেগুলো আমাদের অর্জন করতে হবে। কিছু অর্জন করতে হবে আশুভাবে। কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে অর্জন করতে হবে। কিছু সংবিধানে পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন, বিয়োজন করতে হবে। কোনো কোনো বিষয় আছে যেগুলো আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে। সেগুলো আমরা চেষ্টা করছি, রাজনৈতিক দলগুলো কোন কোন বিষয়ে একমত হতে পারে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য।
আমাদের সময় : আপনারা কি বর্তমান সংবিধানকে সামনে রেখেই সংস্কার করতে চাইছেন? বর্তমান সংবিধান ও প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর মধ্যে মৌলিক পার্থক্যগুলো কী?
আলী রীয়াজ : প্রথম বিষয়টি হলো, আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেখানে বলা হয়েছিল, যেমনÑ ধরুন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের ক্ষেত্রে দায়িত্ব ছিল যে, বিদ্যমান সংবিধানকে পর্যালোচনা করেই সুপারিশ দেওয়া। ফলে জাতীয় ঐকমত্যের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, এই যে সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলো, সেগুলোকে ভিত্তি করা। সেই পরিবর্তনগুলো করতে হবে বিদ্যমান সংবিধানকে সামনে রেখেই। রাজনৈতিক দলগুলো পরে কীভাবে সেটা করবে, পরে তারা যদি মনে করে হ্যাঁ, যেগুলোর ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি, সেগুলো আসলে শুধু সংশোধন সংযোজন বা কিছু বিয়োজনের মধ্য দিয়ে হবে না; আমাদের একটি নতুন সংবিধান তৈরি করে ফেলা দরকার। সে সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলো নেবে। আমাদের দিক থেকে কোনো প্রস্তাব নেই। আমাদের দিক থেকে প্রস্তাব হলো, সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে কোন কোন বিধি-বিধান, সেটা সংবিধানের মধ্যে বিভিন্ন অনুচ্ছেদ থেকে শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে কোন জায়গাগুলোয় পরিবর্তন আনা দরকার, সেগুলো সুপারিশ করা হয়েছেÑ সেই জায়গাগুলোয় আমরা ঐকমত্য আনতে চাচ্ছি।
আমাদের সময় : আপনি তো বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের কথা বলেছেন। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে বহুত্ববাদিতা এই সংবিধান কীভাবে ধারণ করবে? কিছু রাজনৈতিক দল বহুত্ববাদের বিরোধিতা করছে? এটাকে কীভাবে দেখছেন?
আলী রীয়াজ : বহুত্ববাদিতার প্রশ্নটি এসেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকেÑ আমরা যেহেতু ধর্ম নিরপেক্ষতা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছি, সেহেতু আমাদের বক্তব্য ছিল যে ধর্ম নিরপেক্ষতার যে দুর্বলতা থাকে তাত্ত্বিক ও প্রয়োগিকভাবেও সেটা গত দেড়-দুই দশকে দেখেছি। বাংলাদেশে যে ১৭ বছরে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল, সেসময় দেখেছি, যখন ছিল না, তখনও দেখেছি। সেটা হলো, বড় আকারে বাংলাদেশের সমাজের যে বহুত্ববাদী চরিত্র। সে কারণেই রাষ্ট্রের যে মূলনীতি, সেখানে আমরা বহুত্ববাদের কথা বলেছি। আমি মনে করি, এর মধ্য দিয়ে সমাজে যত ধরনের মানুষ আছে, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ে যারা ভিন্ন, ধর্ম পরিচয়ে যারা ভিন্ন, সামাজিক পরিচয়ে যারা ভিন্নতা ধারণ করেন, তাদের সবাইকে রাষ্ট্র সমান মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারবে।
বহুত্ববাদিতার ক্ষেত্রে কারও কারও ভিন্ন রকম পরামর্শ আছে। কেউ কেউ বুঝতেও চাননি বা কেউ কেউ ভুল বুঝেছেন, কেউ কেউ ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন, সেটি তাদের বিষয়। আমাদের লক্ষ্য অবশ্যই ছিল না, যেভাবে বলা হচ্ছে, এটি একত্ববাদের বিকল্প হিসেবে। কিন্তু সেটি আমাদের লক্ষ্য ছিল না। সেটি যে লক্ষ্য ছিল না, সেটির অন্যতম বিষয় হচ্ছে আমরা ধর্মের জায়গা থেকেই শুধু দেখছি না। বহুত্ববাদিতা কখনই একত্ববাদের বিরোধিতা করে না। কিন্তু আমরা বুঝতে পারি। আমরা সেন্টিমেন্টটা বুঝতে পারি।
আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন, বহুত্ববাদিতার কথা বললে রাষ্ট্রধর্ম রাখা যায় কিনা। রাষ্ট্রধর্মের বিবেচনাটা এসেছে ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রধর্ম বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর সব রাজনৈতিক দলই কমবেশি ক্ষমতায় থেকেছে। জোটগতভাবে যদি দেখেন, বিএনপিসহ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট থেকেছে। জোটগতভাবে যদি দেখেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের যে সরকার, সেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ছিলÑ জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় ছিল, বিএনপি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। কেউ কিন্তু এটা পরিবর্তন করেনি। সামাজিক বাস্তবতার বিবেচনায় তারা সেটা মনে করেছে। আমরাও সেটা বিবেচনা করেছি।
আমাদের সময় : প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলেছেন। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এর বিরোধিতা এসেছে। এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন?
আলী রীয়াজ : প্রথমত রাষ্ট্রপতির দুই মেয়াদের বিষয়টি কিন্তু বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানেই আছে। সুতরাং এতে আমরা নতুন কিছু প্রস্তাব করিনি। রাষ্ট্রপতির বিষয়টি আমরা শুধু উল্লেখ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর দুবার ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে কিন্তু বাংলাদেশে আলোচিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর একটা বিশাল অংশ সেটা বলেছে। বড় বড় রাজনৈতিক দলও অতীতে বলেছে যে, তারা চান দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকুক। ওয়েস্টমিনস্টার স্টাইলে আসলে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সুনির্দিষ্ট নেই। সেটা ছয় মাস হতে পারে, আবার ৫ বছরও হতে পারে। সেজন্য আমরা বলেছি দুবার। পর পর দুবার এবং এর বেশি নয়। এটা হচ্ছে প্রস্তাব। কম-বেশি সবাই কিন্তু এই বিষয়টিতে একমত যে, প্রধানমন্ত্রীর দুবারের বেশি বিশেষত পর-পর দুবারের বেশি থাকা উচিত নয়। আবার বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনার মধ্যেও এটা এসেছে, পর-পর দুবার, এর পর একবার বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ। সেটিও আলোচনা হচ্ছে। সব থেকে বড় জিনিস হচ্ছে, ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ বন্ধ করতে হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনে আমাদের বিবেচ্য বিষয় ছিল, ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করতে হবে প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। সেক্ষেত্রে দুই ব্যক্তি বা দুটি অফিস প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ভাগ করলেই হবে না। কারণ তারা দুজন একই দলের হতে পারে। আমাদের লক্ষ্যটা কী, ক্ষমতার ভারসাম্য। এ জন্য আমরা এনএসসির প্রস্তাব করেছি। যেখানে রাষ্ট্রের তিনটা অঙ্গের প্রতিনিধিরা আসবেন, কথা বলবেন, সিদ্ধান্ত নেবেন। সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো আমরা বলেছি। সাংবিধানিক কমিশনগুলোর কথা বলেছি, নির্বাচন কশিনের কথা বলেছি, পিএসসির কথা বলেছি।
আমরা বলেছি যে, এনএসসি থেকে যেন তিন শক্তিকে অ্যাপয়েন্ট করা হয়। তা হলে হবে কী, সরকারি দল, বিরোধী দল, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতিÑ সবাই মিলে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন। রাষ্ট্রের প্রশ্নে, জনগণের স্বার্থের প্রশ্নে এক জায়গায় একত্র করা। ক্ষমতাটা যেন এক ব্যক্তির হাতে না থাকে। যেমনÑ এখন প্রধানমন্ত্রী যে নিয়োগগুলো দেন, রাষ্ট্রপতির নামেই দেন। কিন্তু আমরা তো জানি, প্রধানমন্ত্রীই দেন। আমরা বলেছি, ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাত থেকে আরেক ব্যক্তির হাতে না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের হাতে দেয়। যেখানে সবাই থাকবে। সেভাবেই আমরা ভারসাম্যের কথা বলেছি। সংসদে কীভাবে আমরা ভারসাম্য আনছি। আমরা প্রস্তাব করেছি, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো যেন বিরোধী দলের নেতৃত্বে হয়। তা হলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। বিভিন্নভাবে আমরা বলার চেষ্টা করেছি, কতগুলো পথ দেখিয়েছি যে, ক্ষমতার ভারসাম্য প্রয়োজন।
আমাদের সময় : বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে ইতোমধ্যে আপনারা ৩/৪টি বৈঠক করেছেন। আপনাদের সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপির নিজস্ব বিকল্প প্রস্তাবও রয়েছে, যা তাদের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেক্ষেত্রে কীভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে? বিএনপি কী কী বিকল্প প্রস্তাব করেছে।
আলী রীয়াজ : শুধু বিএনপির সঙ্গে নয়, সবার সঙ্গে আলোচনার প্রাথমিক ধাপ শেষ। আমরা প্রথমে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি, কোন কোন বিষয়ে একমত আছে। একমত বলতে কী, কিছু ভিন্নমত এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে। বিএনপি যেমন করেছে, অন্যরাও করেছেÑ এনসিপি করেছে, জামায়াতে ইসলামী করেছে, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি করেছে। সবার নাম আমি বলছি না। তাদের অবস্থান থেকে তারা মত দিয়েছে। আমরা পরবর্তী ধাপে দেখব এগুলোর মধ্যে কীভাবে সামঞ্জস্য আনা যায়। আমরা তো এখন বুঝতে পারলাম, কোন জায়গাগুলোয় রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য কী। যেমন ধরুন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কারের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য আছে। বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে মূলনীতিগুলোর জায়গায় একমত আছে। বিএনপি তার অবস্থান থেকে বলবে, এনসিপি তার অবস্থান থেকে, জামায়াতে ইসলামী, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি তার অবস্থান থেকে বলবে। সেজন্যই তো আলোচনা। আমরা একটা কথা বললাম, সেটা চূড়ান্ত হতে পারে না। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, ঐকমত্য কমিশনও একটা কথা বলল সেটি চূড়ান্ত হতে পারে না। আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।
আমাদের সময় : আন্দোলনে ছাত্ররা ছিল, রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে মধ্যপন্থি, বামপন্থি সব পক্ষ ছিল। শেখ হাসিনাকে সরানোর ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে একটি সাধারণ ঐকমত্য তৈরি হয়েছিল। অভ্যুত্থানের পর দেখছি, একটি বিভেদ তৈরি হয়েছে। সবারই নির্দিষ্ট ভাবনা আছে, রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে। এ অবস্থায় মৌলিক বিষয়গুলোয় জাতীয় ঐকমত্যের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী হওয়া যায়?
আলী রীয়াজ : আমরা চেষ্টা করছি, আশাও করছি, প্রতিটি রাজনৈতিক দল কিছু না কিছু ছাড় দেবে। তার মধ্য দিয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আমাদের আছে। জাতীয় ঐক্য যেমন ধরুন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের শাসনের বিরুদ্ধে যে ঐক্য, সেই ঐক্য অভিন্নভাবে সেই রকমই থাকবে, সেটি থাকাটা অস্বাভাবিক। কিন্তু ঐকমত্যের জায়গাটা আছে তো। ফ্যাসিবাদ ফিরে আসুক, মানুষ তা চান না। জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র চান, সংসদকে শক্তিশালী দেখতে চান, যেন প্রধানমন্ত্রী এককভাবে ক্ষমতার অধীশ^র হয়ে না পড়েনÑ সেটি চান। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য চান। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চান। চান তো। এগুলোয় ঐকমত্য আছে। আবার ভিন্নমতও আছে। গণতন্ত্রে ভিন্নমত না থাকলে তো গণতন্ত্রই হবে না।
ভিন্নতার জায়গাগুলো আমরা দেখছি। সবাই যে একেবারে কোনো বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেবেন, সেটা আশা করছি না। এটা আলোচনায় আমরা দেখেছি। উনারা আসার সময় অনেক কিছু বলেছেন, এ বিষয়ে একমত না, কিন্তু পরে আলাপ-আলোচনা করে বলেছেনÑ এটা আমরা একমত হতে পারি। শুধু বিবেচনায় রাখবেন, যেন এটি পরিবর্তন করা যায়। ঠিক আছে, আলোচনা হবে।
আমাদের সময় : যেসব সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হবে সেগুলো কি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করবে নাকি নির্বাচিত সংসদ বাস্তবায়ন করবে?
আলী রীয়াজ : নির্ভর করছে কোনটির কথা আমরা বলছি। যেমন ধরুন, বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের একটা স্বচ্ছ ব্যবস্থা করার কথা একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বলা হয়েছে। সেজন্য একটা আইনের প্রয়োজন ছিল। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বলেছে, সংবিধান সংস্কার কমিশনও বলেছে। আমরা বলেছি, জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনের কথা। ইতোমধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল, প্রায় ওরকমভাবে করা হয়েছে। তা হলে সেটি এই সরকারের সময় হলো। আবার ধরুন, কিছু বিষয় আছে, প্রধানমন্ত্রীর দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় না থাকার বিষয়টি। সেটি সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। এটা তো এই মুহূর্তে বর্তমান সরকার করতে পারবে না। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসা একটি সংসদ করবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কারের জন্য কিছু বিষয়, সেগুলো এখনই করা যায়। আইনের মাধ্যমে করা যায়। যেহেতু আমরা দেখছি রাজনৈতিক দলগুলো একমত হচ্ছেন, এখন আমরা সরকারকে বলব, এগুলো আইনের মাধ্যমে করে ফেলুন। পরবর্তী সরকার এসে সেগুলো, যে কোনো আইন তৈরি হলে এরকম পরিস্থিতিতে সংসদ সেগুলো পরে ভ্যালিটেডেট করবে। হয় সেগুলোকে আইনে পরিণত করবে অথবা যদি আইনে পরিণত না করে সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে।
আমরা এভাবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না, এ সরকারের আমলে সব করা হবে। আবার কোনো কিছুই করা হবে না নতুন সংসদ না আসা পর্যন্ত, এরকম অবস্থান না। কিছু বিষয় করা যাবে। যেগুলো করা যাবে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা যাবে। আবার কিছু বিষয় একেবারে ম্যান্ডেট লাগবে, সেগুলো থাকবে পরের জন্য।
আমাদের সময় : ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন বন্দোবস্তের কথা বলা হচ্ছে। জুলাই সনদের কথা বলা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সংস্কার প্রস্তাবনা দিচ্ছে এবং যেসব প্রস্তাবনায় ঐকমত্য হবে সেগুলো জুলাই সনদে থাকবে কিনা?
আলী রীয়াজ : এখানে জুলাই সনদের দুটি বিষয় আছে। কখনও কখনও একটু বিভ্রান্তি তৈরি করে। একটা হচ্ছে প্রোক্লেমেশনÑ যেটাকেও জুলাই সনদ বলে। যেটা রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনা করেছিল। বিবেচনাটা ছিল গত ডিসেম্বরের দিকটাতে আমার যতদূর স্মরণে আছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে একটা প্রোক্লেমেশনের কথা হয়েছিল। সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনার পরে একপর্যায়ে স্থবির হয়ে পড়ে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেটি তারা এখন আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে করে ফেলবেন। সেটা হচ্ছে প্রোক্লেমেশন। ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কোনো যোগাযোগ নেই। আমরা যেটা বলছি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর কী কী সংস্কারের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য তৈরি হয়। এটাকে আমরা জুলাই সনদ বলতে পারি, এটিকে জাতীয় সনদও বলতে পারি। সবচেয়ে বড় জিনিস, এটা আসলে এক ধরনের চুক্তি। চুক্তিটা সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নয়। জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চুক্তি। একটা সামাজিক চুক্তি। আমরা ক্ষমতায় গেলে বা ক্ষমতায় না গেলেও রাজনীতিতে এই আদর্শগুলো বাস্তবায়ন করব। ফলে দুটো জিনিসÑ একটা হলো, ত্রিশ দিনের ভেতর সরকার করবেÑ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ইতোমধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। ফলে তারা একভাবে অগ্রসর হবে। আমরা আমাদের সনদের জায়গাটা ঐকমত্যের ভিত্তিতে করব।
আমাদের সময় : প্রস্তাবিত সংস্কার প্রস্তাবে বিচার বিভাগে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে।
আলী রীয়াজ : বিচার বিভাগের কতগুলো বড় সংস্কারের প্রস্তাব আছে। তার মধ্যে একটা হলো, একটি স্বাধীন সচিবালয় তৈরি করা। আর্থিক স্বাধীনতার জন্য সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, এটি যেন কনস্যুলেটেড ফার্ম থেকে আসে। এখন তো মন্ত্রণালয় থেকে আসে। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল করার মাধ্যমে হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগের পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। যেটা আগে ছিল না। তার পর ধরুন, অধস্তন আদালতগুলো, সেগুলো নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার কথা বলা হয়েছে। এখানকার নিয়োগগুলো আসলে বিচার বিভাগের যে সচিবালয়, সেখানে আসবে। তার পর ধরুন, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিসের কথা বলা হয়েছে। অ্যাটর্নি সার্ভিসটা এখন কী হয়, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এসে নিজেদের লোকজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, অ্যাসিস্টেন্ট অ্যাটর্নি জেনারেল, পিপি তৈরি করে। সেগুলো যেন একটা সার্ভিসের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। তার পর যেমন ধরুন, বলা হচ্ছে যে, একটা আচরণবিধি তৈরি করা দরকার। এরকম বেশ কিছু বিষয় আছে। আমি তো কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করলাম। এগুলো যদি আপনি লক্ষ্য করেন, কাঠামোগত বিশাল পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে। হয়তো দুই মিনিটে বলে ফেললাম কিন্তু বড় রকমের পরিবর্তন ঘটবে। আরেকটি প্রস্তাব হচ্ছে, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ কীভাবে হবে? এখন রাষ্ট্রপতি চাইলে দশ নম্বর ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারেন। আমরা বলেছি যে, একেবারে যিনি সিনিয়র, তিনি প্রধান বিচারপতি হবেন। এটা বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বলেছে, সংবিধান সংস্কার কমিশন বলেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে পাঠানো প্রস্তাবেও এটি বলা হয়েছে। সেটি যদি হয়, তা হলে রাজনৈতিক বিবেচনায় আট, দশ, পনেরো নম্বর লোককে বসানো যাবে না। এগুলো যদি হয় প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, স্বাধীন বিচার বিভাগ সচিবালয়, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করা, এগুলো স্বাধীন বিচার বিভাগ তৈরির ক্ষেত্রে একটা বড় অগ্রগতি বললেও ছোট করে বলা হবে। এটা স্বাধীন বিচার বিভাগ তৈরির ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি করে দেবে।
আমাদের সময় : জনগণ প্রধান অংশীজন; কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তো এ ক্ষেত্রে প্রভাবক শক্তি। রাজনৈতিক দলগুলো পরিস্থিতির কারণে হয়তো আপনাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে কিন্তু অনেক রাজনৈতিক দল ভেতরে ভেতরে আপনাদের সন্দেহ করছে, এটা কি আপনারা বুঝতে পারেন?
আলী রীয়াজ : সংশয় থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংশয়ের জায়গাটা থাকলেও তারা আমাদের সহযোগিতা করছেন। কাজ করছেন আমাদের সঙ্গে। হয়তো তারা বুঝতে পারছেন। আমি ঠিক সংশয়ের ভিত্তিটা বুঝতে পারি না। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কিন্তু সরকার না। আমাদের কাজ হলো সবাইকে একত্র করা। আমরা তো প্রাণপণ চেষ্টা করছি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সেটি করার। ফলে সংশয়ের ইঙ্গিত পাই, তারা হয়তো এক অর্থে রাজনৈতিক কারণে বলেন কিন্তু তাদের সহযোগিতা, আন্তরিকতা নিয়ে আমার মনে কোনো প্রশ্ন নেই।
আমাদের সময় : আপনি আপনার বক্তব্যে বলেছেন, ঐক্য কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে সংস্কার ইস্যুগুলোর ওপর ঐকমত্যে পৌঁছানোর কাজ শেষ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানানো জরুরি এবং জনগণ নির্বাচনের জন্য উদগ্রীব থাকায় প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করার প্রচেষ্টা চলছে। যদি সংস্কার ইস্যুগুলো নিয়ে ঐকমত্য না হয়, সেক্ষেত্রে করণীয় কী হবে? নির্বাচন কি পিছিয়ে যাবে?
আলী রীয়াজ : নির্বাচনের সঙ্গে এটি সংশ্লিষ্ট নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে ঐকমত্যের জায়গাটা তৈরি করা। এই যে আপনি এক ধরনের সন্দেহ দেখালেনÑ যদি না হয়। যদি না হয়Ñ এর কোনো কারণ থাকা উচিত না তো। এত মানুষের প্রাণ যাওয়ার পরে আমরা এক জায়গায় আসতে পারব না কেন? হ্যাঁ, অনেক বড় বিষয়ে হয়তো দেখা যাবে মতপার্থক্য আছে, অনেক ছোট বিষয়ে হয়তো মতপার্থক্য আছে। আবার অনেক বড় বিষয়ে একমত আছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়ে কারও দ্বিমত দেখি না। আবার প্রধানমন্ত্রীর দুই মেয়াদের ব্যাপারে কিছুটা মতভিন্নতা থাকলেও নীতিগত জায়গায় তো একমত যে, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস করা প্রয়োজন। সুতরাং এগুলো তো করা যায়। ফলে না হলে কী হবে সেই প্রশ্নে না গিয়ে, কতটা করা যাবে, সেটা নিয়ে আমি আলোচনা করার পক্ষপাতি। নির্বাচনী প্রক্রিয়া তো ভিন্ন। আপনি উদ্ধৃত করেছেন, আমিও মনে করি, সবাই একটা অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ভোট দিতে চান। ২০০৮ সালের পরে তো কেউ আর নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। সবাই তো চান ভোট দিতে। সুতরাং সেই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকবে।
আমাদের সময় : অনেকে বলছেন, আপনারা সংস্কারে ঐক্য না করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন পেছানোর ব্যাপারে ঐক্য করার চেষ্টা করবেন, এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
আলী রীয়াজ : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজের কারণে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। প্রধান উপদেষ্টা একটি সময় বেঁধে দিয়েছেন ডিসেম্বর থেকে জুন মাস। উপর্যুপরিভাবে তিনি সেটি বলেছেন। সরকারের সেটা লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতি। সরকার সেটি পালন করবে। আমাদের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বলতে পারি, এটাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা কোনো একটা জায়গায় যাব। যতটা পারি অর্জন করব। সবটা অর্জন করতে পারলে ভালো। সবটা না পারলে মেয়াদকালের মধ্যে কাজটা শেষ করতে চাই। ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় মাস হিসাব করেন, আগস্ট হয়। আমরা জুলাইয়ের মধ্যেই শেষ করতে চাই। এর থেকে দ্রুত করা সম্ভব কি-না, আমার জানা নেই।
আমাদের সময় : বিএনপি ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। সেটি কি আপনি পড়েছেন? আপনারা যে জুলাই সনদ করছেন, বিএনপির ২১ দফাসহ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব বিবেচনা করবেন কিনা?
আলী রীয়াজ : অবশ্যই। যখন ঘোষণা করেছে, তখনই এটি আমি পড়েছি। বিএনপির প্রস্তাব হিসেবে বিবেচনা করে ৩১ দফা আমরা বিবেচনা করেছি, বিষয়টি তেমন না। সংবিধান সংস্কার কমিশন যখন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছে, তখন বিএনপি দিয়েছে। আমরা সেটি পড়েছি। আমরা অন্য দলগুলোর প্রস্তাব পড়েছি। জামায়াতে ইসলামীরটা পড়েছি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের পক্ষ থেকে, গণসংহতিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মতামত এসেছে। সেগুলো আমরা পড়েছি। সবারটা পড়ে আমরা একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি যে, এগুলো আমরা করতে চাই। ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে চাই, ক্ষমতার এক কেন্দ্রিকতা চাই না, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চাই, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী দেখতে চাই। এগুলোর সঙ্গে যেগুলো মিলেছে, যার সঙ্গে মিলেছে, সেটিই বিবেচনায় নিয়েছি। এখানে ক দল, খ দল দেখিনি। বিএনপি বলেছে বলেই যে বিবেচনায় নিয়েছি, বিষয়টি তেমন নয়।
আমাদের সময় : ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে কোথায় দেখতে চান?
আলী রীয়াজ : ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই। নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে, বিচার বিভাগ তার সুরক্ষার ব্যবস্থা করছে, গুম খুনের শিকার হচ্ছে না। এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই। নাগরিকের অধিকারের পাশাপাশি মানুষ যেন বলতে পারে যে, শাসন ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, আমি তার অংশীদার, সেরকম একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। আশা করি, এ স্বপ্ন শুধু আমার না, এ স্বপ্ন সারা বাংলাদেশের মানুষের গত ৫৩ বছরের স্বপ্ন।
আমাদের সময় : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আলী রীয়াজ : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ শেষে আমি শিক্ষকতায় ফিরে যেতে চাই। যেটি আসলে আমার কাজ। আমি শিক্ষকতা করি, ছাত্রদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমার ভালো লাগে। আমি আমার গবেষণার কাজে ফিরে যেতে চাই। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এই মুহূর্তের বিবেচ্য বিষয় হলো, যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটি শেষ করা। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছি। একসময় সাংবাদিকতা করেছি। প্রায় ২৬ বছর শিক্ষকতা করেছি। সুতরাং শিক্ষকতায় ফিরে যেতে চাই।
News Courtesy:
Dainik Amader SOmoy