সাক্ষাৎকারে ড. আলী রীয়াজ সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আশা করছি বাকিরাও সই করবে

সাক্ষাৎকারে ড. আলী রীয়াজ সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আশা করছি বাকিরাও সই করবে

শুক্রবার ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষ হলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল এখনো সনদে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে জুলাই জাতীয় সনদে এখনো সই না করা দলগুলোর ব্যাপারে কমিশনের অবস্থান, সনদের বিভিন্ন ধারায় সংশোধন, সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন খবরের কাগজের সিনিয়র রিপোর্টার শাহনাজ পারভীন এলিস। 

খবরের কাগজ: গতকাল ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো। ওই দিন গণফোরাম সই না করলেও আজ সনদে স্বাক্ষর করবে বলে জানা গেছে। তবে এনসিপি এবং চারটি দল এখনো স্বাক্ষর করেনি। তাদের ব্যাপারে কমিশনের পরিকল্পনা কীভাবে এগোচ্ছে?

অধ্যাপক আলী রীয়াজ: আমরা ওই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখছি। তাদের অনুরোধ করছি যেন তারা স্বাক্ষর করেন এবং বিশেষ করে যারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাদের বিষয়গুলো আমরা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কীভাবে মিটিয়ে নিতে পারি, সে কথাবার্তাই চলছে। এনসিপি ও বাকি চারটি দলের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ আলোচনা চলছে। আমাদের লক্ষ্য হলো একটি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া তৈরি করা, যা সবার উদ্বেগ দূর করবে। গণফোরাম ইতোমধ্যে জানিয়েছে তারা স্বাক্ষর করতে রাজি, এ জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই।

খবরের কাগজ: গণফোরামের পক্ষ থেকে দাবি ছিল- ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণার স্বীকৃতি সনদে থাকা চাই। কমিশন এ বিষয়ে কিছু নমনীয়তা দেখালেও পূর্ণভাবে তাদের দাবি অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যার ফলে তারা সনদে স্বাক্ষর থেকে বিরত থেকেছে। এ বিষয়ে কমিশনের ভূমিকা কী হবে?
অধ্যাপক আলী রীয়াজ: গণফোরামের ঐতিহাসিক দাবি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তাদের উদ্বেগ বুঝি এবং সেগুলো আমাদের আলোচনার ক্ষেত্রেও এসেছে। যদিও সনদে পুরোপুরি তা প্রতিফলিত হয়নি, আমরা নমনীয়তার সঙ্গে বিষয়গুলো বিবেচনা করেছি। এ জন্য সংবিধানের সপ্তম তফসিলে থাকা ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারি করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংযোজন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আলোচনায় পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিলের বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে পঞ্চম তফসিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ এবং ষষ্ঠ তফসিলের ১৯৭১ সালের ‘২৫ মার্চ মধ্যরাতের শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে’ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা যুক্ত করা সম্ভব নয়। গণফোরাম আমাদের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রাখবে বলে আশা করছি এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় তাদের মতামত গ্রহণ করা হবে।

খবরের কাগজ: বাকি দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

অধ্যাপক আলী রীয়াজ: আনুষ্ঠানিক নয়, মূলত অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে আমরা তাদের উদ্বেগ বোঝার চেষ্টা করছি। আজকের মতো আমরা চারটি দলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি এবং আশা করছি খুব শিগগির তাদের সঙ্গে বসার সুযোগ হবে। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে, যাতে তারা সনদে স্বাক্ষর করতে পারেন।

খবরের কাগজ: এনসিপি আগে বলেছে, তারা কমিশনের ডাকে আসতে রাজি। আপনারা কি দলটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার উদ্যোগ নেবেন?

অধ্যাপক আলী রীয়াজ: এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। এনসিপির সঙ্গে আমরা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি এবং রাখব। আমাদের মনোভাবই হলো, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা।

খবরের কাগজ: বামপন্থি চার দলও স্বাক্ষর করেনি। তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে?

অধ্যাপক আলী রীয়াজ: হ্যাঁ, তাদের সঙ্গেও কথা বলছি। আমাদের লক্ষ্য তাদের উদ্বেগ বুঝে সেগুলো মিটিয়ে নেওয়া। আমরা আশাবাদী, তারাও শেষ পর্যন্ত সনদে স্বাক্ষর করবে।

খবরের কাগজ: জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরুর আগে রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই?

অধ্যাপক আলী রীয়াজ: রাজনৈতিক উত্তেজনা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আমরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবি সনদের ৫ নম্বর দফায় অন্তর্ভুক্ত করেছি। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছি।

খবরের কাগজ: বর্ধিত মেয়াদে আপনাদের ঐকমত্য কমিশনের কোনো কর্মপরিকল্পনা আছে কী?

অধ্যাপক আলী রীয়াজ: কমিশনের মেয়াদ ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে, যাতে আমরা সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সুস্পষ্ট করে সরকারের কাছে সুপারিশ দিতে পারি। আশা করছি নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ সরকারকে আমরা দিতে পারব।

খবরের কাগজ: জুলাই সনদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

অধ্যাপক আলী রীয়াজ: আমরা সব সময় আশাবাদী। সনদে স্বাক্ষর হওয়ায় ইতোমধ্যেই জাতীয় ঐক্যের একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়েছে। বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। বাকি দলগুলোর উদ্বেগ আমরা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি এবং আশা করছি তাদেরও সহযোগিতা পাব।

খবরের কাগজ: সনদে স্বাক্ষর না করা দলগুলোর অবস্থা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

অধ্যাপক আলী রীয়াজ: স্বাক্ষরের সুযোগ এখনো রয়েছে। যাদের স্বাক্ষর হয়নি, তারাও সনদের স্টেকহোল্ডার হিসেবে গণ্য হবেন। আমরা তাদের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রাখব।

খবরের কাগজ: জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আপনার প্রত্যাশা জানতে চাই?

অধ্যাপক আলী রীয়াজ: আমাদের উদ্দেশ্য জাতীয় ঐকমত্য সুসংহত করা এবং সনদে প্রতিশ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে একত্রিত করে শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগোতে হবে। কারণ জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ায় আমরা একটি ঐতিহাসিক অগ্রগতি অর্জন করেছি, যদিও এখনো কিছু অস্পষ্টতা ও মতবিরোধ রয়ে গেছে; তবে আমরা বিশ্বাস করি এই সনদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারের পথ সুগম করবে। আমাদের কাজ হলো সেই পথে স্থিতিশীল ও কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

খবরের কাগজ: অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ: খবরের কাগজের জন্য শুভকামনা।

News Courtesy:

Khaborer Kagoj | October 19, 2025

 

 

An unhandled error has occurred. Reload 🗙