দেশে গণতন্ত্রচর্চার জন্য জরুরি প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হয়নি
ড. আলী রীয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর। তিনি আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্টও। খ্যাতিমান এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ধর্ম, রাজনীতি, সমাজ, গণমাধ্যম ও রাষ্ট্র বিষয়ে বাংলা-ইংরেজিতে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও বই লিখছেন। সন্ত্রাসবাদ, ধর্ম, রাজনীতি নিয়ে তাঁর গবেষণা বিশ্ব বাঙালি ও সুধীসমাজে প্রশংসিত। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, উন্নয়ন, গণতন্ত্র, গণমাধ্যম বিষয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন কৃতী এই শিক্ষক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- জয়শ্রী ভাদুড়ী
প্রশ্ন : স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার করেছে বাংলাদেশ। একজন খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে বাংলাদেশকে কীভাবে দেখেন? জাতি হিসেবে আমাদের অগ্রযাত্রা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
- গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ এগিয়েছে। দেশের অর্থনীতি বড় হয়েছে, সামাজিক খাতের বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি হয়েছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে প্রথমত বাংলাদেশের নাগরিকদের অভাবনীয় প্রচেষ্টায়। সব ধরনের বিরূপ পরিবেশেও সাধারণ মানুষ তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করেছেন, পাশাপাশি তাঁরা দেশের জন্য অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির যে তিনটি স্তম্ভ- রেমিট্যান্স, তৈরি পোশাকশিল্প এবং কৃষি, তার দিকে তাকালেই এটা বোঝা যায়। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতিতে সক্রিয় তিনটি অ্যাক্টরের প্রচেষ্টা; এগুলো হচ্ছে রাষ্ট্র, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং উদ্যোক্তা। কিন্তু এই সময়ে যেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে সেটা হচ্ছে বৈষম্য দূর করা এবং শাসনব্যবস্থায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি না করা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গৃহস্থালি আয় ও ব্যয় জরিপ অনুসারে, আয়ের জিনি সহগ ২০০০ সালে শূন্য দশমিক ৪৫০ থেকে ২০২২ সালে শূন্য দশমিক ৪৯৯-তে উন্নীত হয়েছে। সম্পদের বৈষম্য তো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে- ২০২১ সালে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ বাংলাদেশি জাতীয় সম্পদের ১৬ দশমিক ৩ শতাংশের মালিক ছিলেন। আর সবচেয়ে দরিদ্র ৫০ শতাংশ মানুষের মালিকানা ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথ থেকে বারবার সরে এসেছে, অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা তিরহিত হয়েছে। গত এক দশকে তার এতটাই অবনতি হয়েছে যে, এখন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থাকে ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্র’ বা পারসোনালিস্টিক অটোক্রেসি ছাড়া আর কিছু বলার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন : ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। এই পররাষ্ট্রনীতি মাথায় রেখে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
- পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে এ ধরনের কথা আপনি অন্য দেশেও শুনবেন। কোনো দেশ, বিশেষ করে ছোট বা মাঝারি আকারের দেশ তো বলে না যে, আমার অনেকের সঙ্গে শত্রুতা আছে। এ ধরনের অবস্থানের কথা ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে দ্বি-মেরুতে বিভক্ত বিশ্বব্যবস্থায় বলা হতো, সেই সময়ে যে জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন ছিল তার সঙ্গে যুক্ত দেশগুলো বলত। সেটা বাস্তবেও ছিল। সেই সময়ের অবস্থা এখন আর নেই, ফলে কথা হিসেবে এটা বলা হলেও আচরণে কী প্রকাশিত হচ্ছে সেটা বিবেচ্য। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে যোগ দিয়েছে, সেটা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন। এখন পৃথিবীতে এক ধরনের মেরুকরণ ঘটছে, আবার অন্যদিকে বৈশ্বিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের কারণে সবার সঙ্গেই সব দেশের সম্পর্ক আছে, থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ঝোঁকটা কোন দিকে তা বোঝা দরকার। কোন দেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্রনীতি প্রভাবিত করছে তা দেখা দরকার। সেখানে দৃশ্যত মোটা দাগে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমাগতভাবে চীনের দিকে সরে যাচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তার দূরত্ব, টানাপোড়েন সৃষ্টি হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশের ভূমিকা চীন এবং অংশ ভারত প্রভাবিত। মিয়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ যদি জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় কোনো পদক্ষেপ নেয় তা কি বৈরিতায় রূপ নিতে পারে না? ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের বিবেচনায়, নাকি তার চেয়ে বেশি? এগুলোই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কেবল কাগজে কী লেখা আছে সেটা দিয়ে বিবেচনা না করাই ভালো।
প্রশ্ন : বর্তমান বিশ্ব বিভিন্ন মেরুতে বিভক্ত। পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে বাংলাদেশ কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে?
- বাংলাদেশ কি আসলেই ভারসাম্য রক্ষা করছে? পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা চীন বা রাশিয়াকে এক ধরনের রক্ষাকবচ বলেই মনে করছেন। ফলে সেখানে জাতীয় স্বার্থের বিবেচনা গৌণ ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন তো সবাই জানেন। যুক্তরাষ্ট্র তার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় এনগেজমেন্ট পলিসি অনুসরণ করছে, কিন্তু মূল্যবোধের বিবেচনায় একটা দূরত্ব আছে। এগুলো বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে। কেননা ক্ষমতাসীনরা দীর্ঘ মেয়াদে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করছেন বলে মনে হয় না। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই পররাষ্ট্রনীতি তৈরি হচ্ছে। সরকারের যেহেতু নৈতিক বৈধতার সংকট আছে সেহেতু বিদেশি শক্তিগুলো সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছে, সরকারকে অনেক রকম আপস করতে হচ্ছে।
প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিশ্ব মোড়লদের খুবই খোলামেলাভাবে কথা বলতে দেখা যায়। এর কারণ কী? তাদের হঠাৎ এ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াকে আপনি কী চোখে দেখছেন?
- আপনি ‘বিশ্ব মোড়ল’ বলে যাদের দিকে ইঙ্গিত করছেন, আমি তাঁদের কাউকেই বিশ্ব মোড়ল বলে বর্ণনা করি না। এখন বিশ্বে যেমন দুই শিবিরে প্রতিযোগিতা হচ্ছে, তেমনি আবার আঞ্চলিক শক্তিরও উত্থান হয়েছে। ফলে কোনো দেশের একক প্রভাবের জায়গা সীমিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া কেন বাংলাদেশ বিষয়ে উৎসাহী হয়ে উঠেছে। এই উৎসাহের কারণ হচ্ছে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীন-যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এ অঞ্চল অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ এবং বঙ্গোপসাগরের কারণে বাংলাদেশ এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া চীন দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাব বাড়াতে চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র চায় তার প্রভাব বৃদ্ধি করতে। এই টানাপোড়েন এ অঞ্চলের অন্য দেশেও হচ্ছে। কিন্তু যেটা দেখার বিষয় সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ একে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে কি না, একটা স্বাধীন অ্যাক্টর হিসেবে তার স্বার্থ রক্ষা করছে কি না। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূমিকা কার্যত তার বিপরীতে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ঝোঁকটা কোন দিকে তা বোঝা দরকার। কোন দেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্রনীতি প্রভাবিত করছে তা দেখা দরকার। সেখানে দৃশ্যত মোটা দাগে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমাগতভাবে চীনের দিকে সরে যাচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তার দূরত্ব, টানাপোড়েন সৃষ্টি হচ্ছে...
প্রশ্ন : গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে বা হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে? পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি তৈরি হয়েছে কি?
- বাংলাদেশের ব্যাপারে গত দেড়-দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থান নিয়েছিল দৃশ্যত সেখান থেকে সরে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে মনে করে না, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অভিনন্দন জানাননি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাইডেন একত্রে কাজ করার কথা বলেছেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন অনেকটা কমবে। তার অর্থ এই নয় যে, দুই পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। বড় কিছু বিষয় এখনো অমীমাংসিত থেকে গেছে; এর মধ্যে একটি হচ্ছে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় যে মেরুকরণ হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ কী ভূমিকা নেবে। অভ্যন্তরীণভাবে নাগরিকদের অধিকারের প্রশ্ন, শ্রমিকদের অধিকারের প্রশ্ন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন, এগুলোতে মতপার্থক্য আছে, দুই পক্ষের মধ্যে অস্বস্তি আছে।
প্রশ্ন : দেশে একই সঙ্গে ব্যাপক দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে। উন্নয়নের এমন বিপরীত চিত্র নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
- গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতির ব্যাপকতা বৃদ্ধিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যে ধরনের উন্নয়ন নীতি এবং কৌশল অনুসরণ করা হয়েছে তার অবশ্যম্ভাবী ফল হচ্ছে এ পরিস্থিতি। ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’-এর চর্চায় দুর্নীতি হবেই। এটাই তো নীতি। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা সুবিধা পাবে। মেগা প্রজেক্ট থেকে শুরু করে গ্রামের রাস্তা তৈরি পর্যন্ত এসব অবকাঠামো প্রকল্প, স্বাস্থ্য খাত, আমদানি-রপ্তানি, ব্যাংকিং খাতে লুটপাট সবকিছুই হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের সমর্থনে, তাঁদের লোকজন দিয়ে। এরাই ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার ভিত্তি। এঁদের সুবিধা না দিয়ে ক্ষমতাসীন দল টিকবে কী করে? আর এ ব্যবস্থার পেছনে আছে জবাবদিহিতাহীন শাসন। নির্বাচনের নামে ২০১৪ থেকে কী হচ্ছে সেটা তো দেখছেন। এর বাইরে যে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকতে পারত, সিভিল সোসাইটি, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম- সেগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ফলে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তরা জানেন তাঁরা দায়মুক্তি পেয়েই আছেন।
প্রশ্ন : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনের বিষয়গুলোসহ সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের যে যোগসূত্র, তা নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ কী?
- বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে যে ধরনের ইতিবাচক ধারণা ছিল, গত এক বছরে তাতে পরিবর্তন এসেছে। এই প্রবৃদ্ধির পেছনে যেসব ব্যত্যয় আছে সেগুলো এখন অনেক বেশি আলোচিত। গত ছয় মাসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বাংলাদেশবিষয়ক প্রতিবেদনগুলোর দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন। আগে যেভাবে এই প্রবৃদ্ধিকে এককভাবে প্রাধান্য দেওয়া হতো এখন সেখানে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের একটা বড় ভিকটিম যে বাংলাদেশ সেটা কমবেশি সবার জানা। যে কারণে এ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্ব পাচ্ছে, এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক তহবিলে বাংলাদেশের বরাদ্দ নিশ্চিত থাকছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে এখন আর খুব বেশি আলোচিত নয়। সাম্প্রতিককালে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয় উল্লিখিত হচ্ছে। বাংলাদেশও যে এ বিষয়ে কথা বলছে তা নয়।
প্রশ্ন : আপনি সাংবাদিকতার ছাত্র-শিক্ষক। নিজে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্তও ছিলেন। আজকের বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে কী বলবেন? সারা বিশ্বের সাংবাদিকতা থেকে আমরা কতটুকু এগিয়ে বা পিছিয়ে আছি?
- বাংলাদেশে সাংবাদিকতা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। স্বাধীন এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা এখন প্রায় অনুপস্থিত হয়ে গেছে। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে গণমাধ্যমগুলো ক্রমাগতভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমি সারা বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করার দরকার মনে করি না। দেড় দশক, এমনকি এক দশক আগেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো গণমাধ্যমের, সাংবাদিকদের এবং নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় যে ভূমিকা পালন করত এখন তা পালন করে না। এর কারণ তিনটি। প্রথমত, সামগ্রিকভাবে মতপ্রকাশের অধিকার সীমিত হয়ে আসা, নাগরিকদের অধিকার যেখানে সীমিত সেখানে সাংবাদিকতা স্বাধীন হতে পারে না। আইনি ও আইনবহির্ভূতভাবে সরকার বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। দ্বিতীয়ত, মালিকানার ধরনে বড় ধরনের পরিবর্তন; এখন গণমাধ্যমের মালিকানা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের হাতে কুক্ষিগত হয়েছে, যারা তাঁদের অন্যান্য বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার জন্য গণমাধ্যমকে ঢাল হিসেবে এবং ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সখ্যের জন্য ব্যবহার করেন। তৃতীয়ত, সাংবাদিকরা দলের পরিচয়ে বিভক্ত হয়ে গেছেন, তাঁরা দলের কাছ থেকে সুবিধাকেই প্রাপ্তি বলে বিবেচনা করেন, তাঁদের দায়িত্ব পালন করলেন কি না সে বিষয়ে চিন্তিত নন। এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যারা যুক্ত তাঁরা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির জন্যই নিবেদিত থাকেন।
প্রশ্ন : ‘বাংলাদেশ গণতন্ত্র : অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ’- এই শিরোনামে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।
- এ বিষয়ে সংক্ষেপে বলা দুরূহ। তবে যেটা সহজেই দৃশ্যমান তা হচ্ছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে একাধিক সুযোগ তৈরি হয়েছিল, যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল, ১৯৯১ এবং ২০০৯ সালে সেগুলো বাস্তব রূপ নেয়নি। তার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যারাই ক্ষমতায় গেছেন তারাই তাঁদের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার চেষ্টা করেছেন। তদুপরি গণতন্ত্রচর্চার জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো জরুরি সেগুলো তৈরি বা শক্তিশালী করা হয়নি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বদলে দল এবং ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে। এ চেষ্টা করা হয়েছে শক্তির মাধ্যমে এবং সাংবিধানিকভাবেও। এসব সত্ত্বেও এক ধরনের ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র চালু ছিল, যাত্রামুখটা ছিল সামনের দিকে। ২০১১ সালের পর থেকে সেই যাত্রা পশ্চাদ্মুখী হয়েছে, স্বৈরাচারীকরণ হয়েছে; এখন দেশ কেবল কার্যত একদলীয় শাসন নয়, ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনের যুগে প্রবেশ করেছে। তবে রাজনীতিতে কিছুই নিয়তি নয়, কেনো শাসনব্যবস্থাই অপরিবর্তনীয় নয়।
News Courtesy:
https://www.bd-pratidin.com/15-years-of-entering-bangladesh-every-day/2024/03/15/975764?fbclid=IwAR1iU6svfGGzsOISXeO6-Q4ATBiNTFfTPxDKCrAFlb3BOpzqstwxFfJMzWI