করোনাভাইরাসের যে ক্ষতি যাবে না

করোনাভাইরাসের যে ক্ষতি যাবে না

বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এখন এক নতুন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিস্থিতি ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়েছে। ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে পরিস্থিতির ভয়াবহতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যেই এ ভাইরাসের নতুন ধরনের বিস্তার ঘটছে। একাধিক টিকা আবিষ্কার, তা বিতরণ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ শুরু হলেও বিপদ যায়নি, বরঞ্চ একাধিক ক্ষেত্রে তা আরও অনিশ্চয়তার সূচনা করেছে। অনেক দেশে টিকা বিতরণের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে অব্যবস্থা, কোথাও কোথাও আস্থার সংকট, অবস্থার আরও অবনতি ঘটাচ্ছে। এ পরিস্থিতির আশু অবসান হবে না।

প্রায় এক বছর ধরে চলা এ মহামারি সারা পৃথিবীকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। মহামারির প্রকোপ, সরকারি অবহেলা, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং বিরাজমান আর্থ-সামাজিক কাঠামোগত বৈষম্যের কারণে ইতোমধ্যেই সারা পৃথিবীতে কুড়ি লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর আশু এবং প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির ওপর; এক হিসাবে বলা হচ্ছে, ২০২০-২১ সালে বিশ্বের জিডিপির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে কমপক্ষে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার। বিশ্বজুড়ে মন্দা এখন সুস্পষ্ট। বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৪.৩ শতাংশে সংকুচিত হয়েছে। তবে সংস্থার পূর্বাভাস হচ্ছে ২০২১ সালে বিশ্বের অর্থনীতি ৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৩.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। এ পূর্বাভাস অবশ্য শর্তসাপেক্ষ। তা হচ্ছে টিকা সংগ্রহ এবং তা যথাযথভাবে বিতরণ। এসব ক্ষেত্রে ব্যত্যয় বা ব্যর্থতা ঘটলে যে প্রবৃদ্ধি একেবারেই অর্জন হবে না, সেটি বিশ্বব্যাংক বলেনি; কিন্তু এগুলো বাদ দিলে তার যে একটি অর্থনৈতিক মূল্য আছে, সেটি সবাই উপলব্ধি করতে পারেন।

গত দুই মাসে টিকা সংগ্রহ এবং বিতরণের ঘটনাপ্রবাহ যে ইঙ্গিত দেয় তাকে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘ভ্যাকসিন ন্যাশনালইজম’ বলে। বিশ্বের মানুষের অভিন্ন স্বার্থ বিবেচনা করা, সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বদলে নিজের জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার এ প্রবণতার নামই হচ্ছে টিকা জাতীয়তাবাদ। টিকা বিষয়ে গবেষণার সূচনা এবং আবিষ্কারের আগে থেকেই এ টিকাকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটেছে। মানবিক বিবেচনা, তুলনামূলকভাবে বঞ্চিতদের জন্য সুবিধা দেওয়ার নৈতিক বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখার বদলে নিজের দেশের নাগরিকদের বিবেচনায় টিকা সংগ্রহ এবং বিতরণের ক্ষেত্রে প্রাধান্য লাভ করার মধ্যে যে বিশ্বব্যবস্থা আমরা দেখতে পাই তা নতুন নয়। করোনাভাইরাসের মহামারির সূচনায় এ শিক্ষা সবার কাছে স্পষ্ট হয়েছিল, এককভাবে একে মোকাবিলা করা যাবে না, অর্থাৎ সবার স্বার্থকেই বিবেচনায় নিতে হবে; এটিও স্পষ্ট হয়েছিল, গত কয়েক দশক ধরে নব্য-উদারনৈতিক অর্থনীতির কাঠামো যে চিকিৎসাকে মুনাফার হাতিয়ারে পরিণত করেছে তার একটি কুফল হচ্ছে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা। এর পরিবর্তন বা সংস্কার ছাড়া সবার জন্য চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু টিকা বিতরণের ক্ষেত্রে এসব বিবেচনা একেবারেই ধর্তব্যে নেওয়া হয়নি। ফলে সবার জন্য টিকা পাওয়ার নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি।

বিবেচনার বিষয় হচ্ছে, একবারে অর্থনৈতিক বিবেচনা অর্থাৎ বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্যই টিকা বিতরণে সমতার প্রয়োজন। ২০২১ এবং ২০২২ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির যে প্রবৃদ্ধির হিসাব দেওয়া হয়েছে সেখানে টিকা পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। র‌্যান্ড করপোরেশন ইউরোপের জন্য করা এক গবেষণায় মার্কো হাফনার, ইরেজ ইয়ূরশালমি, ক্লিমেন্ট ফেয়স, ইলায়েন ডুফ্রেসনে এবং ক্রিস্টিয়ান ভ্যান স্টোক দেখান যে, যারা টিকা তৈরি করেছে তারাই যদি টিকা পায়, তবে বিশ্বের মোট জিডিপি প্রতি বছর ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবে; যদি উচ্চ আয়ের দেশ আর টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলো টিকা পায়, তবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে বছরে ২৯২ বিলিয়ন ডলার, আর যদি উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশ এবং টিকা প্রস্তুতকারী দেশগুলো টিকা পায়, তবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দরিদ্র দেশগুলো যতক্ষণ না পর্যন্ত টিকা পাচ্ছে বিশ্বের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ততই দূরের বিষয়।

এ কথা আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হলেই দরিদ্র দেশগুলো তা থেকে লাভবান হবে এমন নয়। ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের দেশগুলোর ঋণের বোঝা বাড়বে। শুধু দরিদ্র দেশ নয়, এ মহামারির সবচেয়ে বড় ভার বইতে হচ্ছে দরিদ্র মানুষকে। গত বছর অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে ১১৫ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার, অর্থাৎ দিনে এক ডলার ৯০ সেন্টের নিচে যাদের আয় নিচে চলে গেছেন; এ সংখ্যা ১৫০ মিলিয়ন হতে পারে। সব মিলে দরিদ্র মানুষের তালিকায় আরও ৫০০ মিলিয়ন মানুষ যুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে অক্সফামের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি অতিধনীদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার।

দারিদ্র্য এবং বৈষম্য বৃদ্ধির পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর পরিসংখ্যানের দিকে তাকানোর দরকার হয় না, তাদের চারপাশে তাকালেই বুঝতে পারার কথা। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপের শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল, এতে করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তাদের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা তৈরি করা দরকার এবং যেগুলো আছে সেগুলোকে জোরদার করা দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা এবং আংশিক বাস্তবায়নের পরে দেখা যাচ্ছে, তা দারিদ্র্য মোকাবিলায় সফল হয়নি। দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে অত্যন্ত উদ্বেগজনকভাবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম-এর করা জানুয়ারি ২০২১ সালের জরিপে দেখা যাচ্ছে, করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার (আপার পোভার্টি রেট) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ (প্রথম আলো, ২৩ জানুয়ারি ২০২১)। এ জরিপে দেখা যাচ্ছে, এ দুর্দিনেও বৈষম্য বেড়েছে- অর্থাৎ দরিদ্ররা যত বেশি হারে দরিদ্র হয়েছেন, ধনীরা সেই হারে সম্পদ হারাননি নতুবা আরও সম্পদ সঞ্চয় করেছেন।

এ জরিপের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে শিক্ষা খাতে অংশগ্রহণের হারে হ্রাস। ওই জরিপে দেখা যাচ্ছে, ‘২০১৮ ও ২০২০ সালের মধ্যে মাথাপিছু গড় শিক্ষা ব্যয় কমেছে। অতিদরিদ্র পরিবারের জন্য এ হার হ্রাস সবচেয়ে বেশি ৫৮ শতাংশ। পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষায় দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও কম।’ এ তথ্য বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয় অবশ্যই। কিন্তু বিশ্বজুড়ে মহামারির এক বছর পার হওয়ার পর আমরা দেখতে পাচ্ছি, আর যত ধরনের ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো পুষিয়ে নেওয়ার পথ পদ্ধতি হয়তো বের করা যাবে; কিন্তু যে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে, তা হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে একটি পুরো প্রজন্মই পিছিয়ে পড়েছে।

শিক্ষার অধিকার যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্য দিয়েই নির্ধারিত হয়, সেটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়; কিন্তু করোনাকালে তা আরও বেশি প্রকট রূপ লাভ করেছে যখন অনলাইন শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাসে ইউনেস্কোর হিসাবে দেখা গিয়েছিল, সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮৩০ মিলিয়ন শিক্ষার্থী- যা মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেক ইন্টারনেট এক্সেস নেই। ফলে করোনাকালে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে যারা শিশু শিক্ষার্থী, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ কারণে যে, তাদের একাংশ শিক্ষা থেকেই ঝড়ে যেতে পারে। সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ৯০ লাখ শিশু শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝরে যেতে পারে। মনে রাখা দরকার, এ ঝরে পড়ার হার সর্বত্র এক রকম হবে না। দরিদ্র দেশগুলোতে এ হার অন্যদের চেয়ে বেশি হবে। ধনী দেশগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠী-এর শিকার হবে। আর যেখানে এ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা হচ্ছে সেসব দেশ যেখানে শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ এবং শিক্ষার মানের ব্যাপারে ব্যাপক উদাসীনতা থেকে এটি সহজেই অনুমান করা যায়, বাংলাদেশকে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের যে কোনো ধরনের সর্বাত্মক বা কমপ্রিহেনসিভ পরিকল্পনা ও কৌশল নেই, তা ইতোমধ্যেই সুস্পষ্ট। ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া না দেওয়া নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে এবং একসময় অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু এ আলোচনায় যা অনুপস্থিত তা হচ্ছে কেবল সময়ের বিবেচনায় নয়- মানের বিবেচনায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কি পরিকল্পনা করা হচ্ছে?

শিক্ষা খাতের বৈষম্যের সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়া এবং বড় প্রভাব হচ্ছে গোটা জীবনচক্রেই তার প্রতিফলন ঘটে- কে কতটা আয় করতে পারবেন, সেটি যেমন এতে নির্ধারিত হয়, তেমনি নির্ধারিত হয় ওই ব্যক্তি কতটা স্বাস্থ্য সুবিধা লাভ করবেন, তার আয়ু কত হবে। বাংলাদেশে গড় আয়ু বাড়লেও সমাজের দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিতরাও একই মাত্রার আয়ু লাভ করেন সেটি মনে করার কারণ নেই। করোনাভাইরাস আগামীতে এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে কিনা সেটি এখন থেকেই নজরে রাখা দরকার। করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশে, অন্যান্য অনেক মধ্য আয়ের এবং দরিদ্র দেশের মতোই, এক বড়সংখ্যক মানুষ তাদের খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। গত বছরের জুলাই মাসে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ বলে একটি প্রতিষ্ঠান এক জরিপে দেখিয়েছিল, ‘দরিদ্র পরিবারগুলোর পাঁচ শতাংশই দিনে মাত্র একবেলা খেয়েছেন। অথচ মহামারি শুরুর আগে উত্তরদাতাদের ৯১.৬ শতাংশ দিনে তিনবেলা এবং বাকিরা দুবেলা খাবার খেতে পারতেন’ (বিডিনিউজ২৪, ১৬ জুলাই ২০২০)। পুষ্টির সংকট নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের এক বড় প্রতিবন্ধক; যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আগেই চিহ্নিত হয়েছে। মহামারির প্রভাবে এটি যে আরও বড় আকার নেবে সেটি বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

সারা বিশ্বজুড়েই যেসব বিষয় এখন আলোচনার এবং উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে শিক্ষা খাতে করোনাভাইরাসের এ দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। একটি প্রজন্ম যেন শিক্ষা খাত থেকে হারিয়ে না যায়, ইতোমধ্যে যে বিশাল বৈষম্য আছে তা যেন আরও বৃদ্ধি না পায়, মানের যে ক্ষতি হয়েছে সেটি কীভাবে মোকাবিলা করা যায়। এজন্য দরকার হচ্ছে বহুমাত্রিকভাবে এ সমস্যাকে বিবেচনা করা। করোনাভাইরাসের ক্ষতি কেবল অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখাই যথেষ্ট নয়।

লেখক : যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো

News Courtesy:

https://www.jugantor.com/todays-paper/jugantor-22-anniv/390250/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AF%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE?fbclid=IwAR3X8_HR8d0I3q9qqbApnqkVwxCAB6Gk466WL5Il1HN4PJ6cWFHH4_tB14Q

An unhandled error has occurred. Reload 🗙