ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ১০০ বছরের ইতিহাসের অন্যতম দিক হচ্ছে, এর অর্ধেক সময় কেটেছে ঔপনিবেশিক শাসনের আওতায়—ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি, বাকি অর্ধেক স্বাধীন বাংলাদেশে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আত্মসমীক্ষার সময়; শতবার্ষিকী এই আত্মসমীক্ষাকে আরও বেশি প্রয়োজনীয় করে তোলে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও দরকার আত্মসমীক্ষার। এর জন্য যে প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া অত্যাবশ্যক, তা হলো—গত ১০০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন কী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের অর্জনের হিসাব করতে গেলে বিবেচনা করতে হবে যে নতুন জ্ঞান উৎপাদনের লক্ষ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জন্য যে অত্যাবশ্যকীয় শর্ত—বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতা বা একাডেমিক ফ্রিডম—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেটা নিশ্চিত করতে পেরেছে কি না। একাডেমিক ফ্রিডমের ধারণার উপাদান দুটি—শিক্ষা দেওয়ার স্বাধীনতা এবং জ্ঞানার্জনের স্বাধীনতা। তা ছাড়া একাডেমিক ফ্রিডমের দুটি দিক হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন। প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন ছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আলাদা করে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় না। ফলে বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতা বা একাডেমিক ফ্রিডমের আলোচনার কেন্দ্রে সব সময় থেকেছে প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্ন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পেরেছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যে আইনি ব্যবস্থা আছে, তার মধ্যে। গত ১০০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে আইন হয়েছে তিনটি—ব্রিটিশ আমলে ১৯২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়ে, ১৯৬১ সালে পাকিস্তান আমলে সেনাশাসনের আওতায় এবং ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে। মোটা রেখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের যে তিনটি পর্ব, এই আইনগুলো তারই প্রতিনিধিত্ব করে।
সূচনাপর্ব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত আছে ১৯০৫ সালের ‘বঙ্গভঙ্গ’। ১৯১১ সালে বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়, তারপরে এই অঞ্চলের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ প্রশমিত করার উদ্দেশ্যে ১৯১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছিল। যদিও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল, যেহেতু রাজনৈতিক বিবেচনাই এর প্রথম দিক ছিল, শেষ পর্যন্ত ১৯২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে রাষ্ট্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক কী হবে, সেই আলোচনা উঠেছিল। ১৯১২ সালে গঠিত নাথান কমিটির সুপারিশ ছিল ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার; এই কমিটি তার প্রতিবেদনে ‘স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের’ পক্ষেই সুপারিশ করেছিল। কিন্তু ১৯১৭ সালে স্যাডলার কমিশনকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ে পরামর্শ দিতে বলা হয়, কমিশন তখন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে মত দিয়েছিল। এই আলোচনার প্রেক্ষাপটেই ঢাকা কলেজের দুজন শিক্ষক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত এবং টি সি উইলিয়ামস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে জোরালো বক্তব্য দেন।
১৯২০ সালের মার্চে প্রণীত আইনে ভারতের গভর্নর জেনারেলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভিজিটর’ বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। আইনে বলা হয়েছিল, বাংলার গভর্নর হবেন চ্যান্সেলর। ভাইস চ্যান্সেলরকে নিয়োগ দেবেন চ্যান্সেলর, নির্বাহী কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে। কিন্তু নির্বাহী কাউন্সিলকে প্রভাবিত করার ব্যবস্থা আইনের মধ্যেই লুকানো ছিল। এই আইনে বলা হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কোর্ট থাকবে; কোর্ট বলতে এমন এক প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছিল, এখন যাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট বলা হয়ে থাকে, তার মতো। এতে দুই ধরনের সদস্য থাকবেন—পদাধিকারবলে এর সদস্য হবেন চ্যান্সেলর, ভাইস চ্যান্সেলর, ট্রেজারার (যিনি চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত), রেজিস্ট্রার (যাঁকে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ করবেন চ্যান্সেলরের অনুমোদন সাপেক্ষে), প্রভোস্ট এবং ওয়ার্ডেনরা (যাঁরা ভাইস চ্যান্সেলরের নিয়োগকৃত), অধ্যাপকেরা এবং রিডাররা। এর বাইরে দ্বিতীয় শ্রেণির সদস্য হবেন নির্বাচিত রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, ৫ জন নির্বাচিত লেকচারার, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং জীবন সদস্য ১০ জন, যাঁদের চ্যান্সেলর নিয়োগ করবেন। এগুলো থেকে সহজেই দেখা যাচ্ছে চ্যান্সেলরের প্রভাব কতটা। নির্বাহী কাউন্সিলের ওপরে দায়িত্ব ছিল, ভাইস চ্যান্সেলরের নাম চ্যান্সেলরের কাছে সুপারিশ করবেন, কিন্তু এই কাউন্সিলের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের ক্ষমতা ছিল কোর্টের ওপরে। ফলে ঘুরেফিরে চ্যান্সেলরের অর্থাৎ সরকারের প্রভাব ছিল অভাবনীয়। এই সব ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য অনুকূল ছিল না। ফলে ব্যক্তিগতভাবে কোনো কোনো উপাচার্যের ভূমিকা প্রশংসনীয় হলেও প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকশিত হয়নি।
পাকিস্তান আমল
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরেও এই আইনের আওতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়েছে, একাদিক্রমে কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের প্রত্যক্ষ প্রভাব অব্যাহত ছিল। এই অবস্থার আরও অবনতি ঘটে ১৯৬১ সালে—আইয়ুব খানের সামরিক সরকার কর্তৃক জারি করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোকে বদলে দেয় এবং আরও প্রত্যক্ষভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এই আইনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল কোর্ট (বর্তমান সিনেটের মতো) বাতিল করে দেওয়া। নির্বাহী কাউন্সিল বাতিল করে দিয়ে তাকে সিন্ডিকেট নামকরণ করা হয়, তার সব সদস্য নির্ধারণ করা হয় পদাধিকারবলে ও প্রশাসনের মনোনীত হিসেবে এবং তার ক্ষমতা কেবল উপদেশ দেওয়ার। এই আইনে ভাইস চ্যান্সেলর সরাসরি চ্যান্সেলর কর্তৃক চার বছরের জন্য নিয়োগ হবেন। ভাইস চ্যান্সেলরের হাতে অভাবনীয় ক্ষমতা প্রদান এবং তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আপত্তির জায়গা না থাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সরকার এবং ভাইস চ্যান্সেলরের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়। এই আইনি ব্যবস্থাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। এই সময়ে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাই মুখ্য হয়ে ওঠে। তা ছাড়া শিক্ষকদের রাজনীতি করার ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এই রকম পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন অধ্যাপক পদত্যাগ করেন এবং কয়েকজন অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩
দেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছরের বেশি সময় পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩ জারি করা হয়। ১৯৬৯ সালের গণ–আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের দাবি ওঠে। ইতিমধ্যে অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের নেতৃত্বে শিক্ষকদের একটি কমিটি স্বায়ত্তশাসনের বিভিন্ন দিকের ১৪ দফাসংবলিত একটি খসড়া তৈরি করেন এবং তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের প্রতিনিধি এয়ার মার্শাল নূর খানের সঙ্গে দেখা করে এই সব প্রস্তাব পেশ করেন (মনিরুজ্জামান মিয়া, রিভিজিটিং দ্য ডি ইউ অর্ডার, ১৯৭৩, দ্য ডেইলি স্টার, ১২ মে ২০০৮)। কিন্তু এই বিষয়ে অগ্রগ্রতি হওয়ার আগেই স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা হয়। স্বাধীনতার পরে এই খসড়াকে ভিত্তি করেই শিক্ষকদের মধ্য থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সময়ে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর একটি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে, যার প্রধান ছিলেন অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক; অন্যটি প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বে। শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রশাসনিক কমিটি শিক্ষকদের দাবি সরকারের কাছে উত্থাপন করে, যার ভিত্তিতে ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারি করা হয়, তবে তার কার্যকারিতা শুরু ভূতাপেক্ষভাবে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে।
১৯৭৩ সালের আদেশ কেবল যে সিনেট প্রতিষ্ঠা করে, তা–ই নয়; সিনেট, সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করে। নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষক ও গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এমনকি ডিন পদে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়, বিভাগীয় প্রধানের পদে যাতে একক ব্যক্তির দীর্ঘ মেয়াদে আধিপত্য না থাকে, সে জন্য তা চাকরির মেয়াদের বিবেচনায় রোটেশনের ব্যবস্থা করে। ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের যে পদ্ধতি তৈরি করা হয়, তাতে সিনেটের পক্ষ থেকে তিনজনের একটি প্যানেল চ্যান্সেলরের কাছে পাঠানো হবে, যেখান থেকে তিনি একজনকে নিয়োগ দেবেন। এই সব ব্যবস্থা স্পষ্টত অংশগ্রহণমূলক এবং দৃশ্যত গণতান্ত্রিক; কিন্তু এর মধ্যেই সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত। ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগে চ্যান্সেলরের কর্তৃত্বকে বিবেচনা করতে গিয়ে মনে রাখতে হবে যে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান এবং বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে যে রাষ্ট্রপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই কাজ করবেন। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ সব স্তরে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার ফলে এমন সব পদে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেগুলোতে নিয়োগের বিবেচনা হওয়া উচিত ছিল একাডেমিক ক্ষেত্রে সাফল্য; এর মধ্যে ডিন পদের নির্বাচনের কথা সহজেই উল্লেখ্য।
নতুন ব্যবস্থায় শুরু থেকেই উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাই যে প্রাধান্য পেতে শুরু করে, তা সহজেই দৃষ্ট। অধ্যাপক আহমেদ কামাল, যিনি ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের আওতায় অনুষ্ঠিত প্রথম সিন্ডিকেটে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধিদের একজন ছিলেন, তিনি লিখেছেন, ‘তখন [১৯৭৩ সালে] উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল মতিন চৌধুরী তৎকালীন সরকারি দলের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে সরকারি দলের নিয়মিত হস্তক্ষেপকে প্রশ্রয় দেন।’ ১৯৭৫ সালে সামরিক শাসনের পরে উপাচার্য পদ থেকে আব্দুল মতিন চৌধুরীর অপসারণ এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অন্যায় ব্যবস্থার পেছনেও ছিল রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পদ এতটাই দলের রাজনীতিনির্ভর হয়েছে যে উপাচার্য পদে কারা নিয়োগ পাবেন, তা এখন সহজেই বলা যায়। অধ্যাপক মইনুল ইসলাম লিখেছেন, ‘এখন কি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দাবি করতে পারবেন যে সরকার তাঁর পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে উপাচার্য নিয়োগ করেছে?’ (মইনুল ইসলাম, শিক্ষকদের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি, প্রথম আলো, ১০ অক্টোবর ২০১৮)।
News Courtesy:
https://www.prothomalo.com/opinion/%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%A0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%A8