নির্বাচন কমিশন গঠন আইন ও সার্চ কমিটি দেখে আগামী নির্বাচনের কোন ইঙ্গিত কী পাওয়া যাচ্ছে?
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ছয় সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। এর ভিত্তি হচ্ছে সম্প্রতি সংসদে পাশ হওয়া ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২’।
এই আইনে আগে দুইবার ২০১২ এবং ২০১৭ যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিলো তার বৈধতা দেয়ার বাইরে আর কিছুই নেই। স্মরণ করা দরকার যে, এটি নির্বাচন কমিশন বিষয়ে পুর্ণাঙ্গ আইন নয়। ২০১২ এবং ২০১৭ সালের ধারাবাহিকতায়ই এই নতুন সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগের বারের মতো এবার আইন করেই এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি। আগের দুইবার এই ধরণের কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো এড-হক ভিত্তিতে, কিন্ত এখন আইনের মাধ্যমেই করা হয়েছে। কিন্ত অনেকের মনে থাকবে যে, ত্রয়োদশ সংশোধন বাতিলের রায়ে পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যেন বিচার বিভাগকে যুক্ত না করা হয়। এর স্পিরিট বা মর্মবানী ছিলো নির্বাহী বিভাগের কাজের সঙ্গে বিচার বিভাগকে যুক্ত করা না হয়; তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিচার বিভাগের সম্পৃক্তি যে রাজনীতির বৃক্তচক্রে যুক্ত হওয়া তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্ত এখন আইন করে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে করে রাজনীতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিচার বিভাগকে সংযুক্ত করা হয়েছে।
নতুন সার্চ কমিটির প্রধান হয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি আগের দুই বার সার্চ কমিটির সদস্য ছিলেন। ঐ সব সার্চ কমিটিই নুরুল হুদা ও রকিব উদ্দিন কমিশন গঠন করেছিলো। তাঁদের কমিশন কী ধরণের নির্বাচন উপহার দিয়েছে তা সকলের জানা। এ বিষয়ে বেশি বলার প্রয়োজন নেই।
এই নতুন সার্চ কমিটির একজন সদস্য হয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. ছহুল হোসাইন। জনাব হোসাইনের আরেকটি পরিচিতি আছে - ২০১৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্যে আবেদন পত্র কিনেছিলেন। মানবজমিন পত্রিকার ১১ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো – “নির্বাচনী মাঠে নামছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন। মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সিলেট সদর ও সিটি করপোরেশন) আসন থেকে প্রার্থী হতে চান। এজন্য তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তিনি প্রথম দিনই তার পক্ষে মনোনয়নপত্র কেনার পর সেটি জমা দেয়ারও প্রস্তুতি চলছে”। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ছহুল হোসাইনের ভাতিজা সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন সজীব গতকাল বিকেলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়ে ছহুল হোসাইন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের জন্য ফরম কিনেছেন। সেটি জমাও দেয়া হবে।” সার্চ কমিটিতে নিয়োগ পাবার পরে ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাতকারে বলেছেন যে, ‘নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম বলেই আ. লীগ হয়ে গেছি, বিষয়টি তেমন না’। দল না করে কোনও রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করা যায় এমন ধারণাই দেবার চেষ্টা করেছেন ছহুল হোসাইন।
নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্যে যে ধরণের আইন করা হয়েছে এবং তাঁর আওতায় যাঁদের নিয়ে এই সার্চ কমিটি তৈরি করা হয়েছে তাতে আগামী নির্বাচনের কোন ইঙ্গিত কী পাওয়া যাচ্ছে?
আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট।
News COurtesy:
https://mzamin.com/article.php?mzamin=314517&fbclid=IwAR1GxLSk0wpiQ4RT25YdPOMy2qvH10szhcSj6kh8AXYw3r7P9goR14eOLD4