ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টের ভয়াবহতার সরকারি স্বীকৃতি?
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেয়া হিসেব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রণীত হবার পর থেকে ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৭০০১টি মামলা হয়েছে। এই প্রথম সরকারের পক্ষ থেকে এই আইনে মোট মামলার একটি সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বলা হলো। এই আইন বহাল আছে ৫৬ মাস, সরকারের দেয়া তথ্য হচ্ছে ৫২ মাসের। এই আইনে গড়ে প্রতি মাসে মামলা হয়েছে ১৩৪টির বেশি। এই হিসেব গড়ে প্রতিদিন ৪টির বেশি ৪.৪৮টি মামলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই আইনে আটক ব্যক্তির সংখ্যা বলা হয়নি।
ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট বিষয়ে এই তথ্য যদিও পূর্ণাঙ্গ চিত্র দেয় না, তথাপি এর ভয়াবহতা বোঝার জন্য সরকারের দেয়া এই তথ্যই যথেষ্ট। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের পক্ষ থেকে আমি এবং আমার গবেষণা দল এই আইনে রুজু করা মামলাগুলো অনুসরণ করে আসছি। ৩১ মে ২০২৩ পর্যন্ত আমরা ১৩২৫টি মামলার বিস্তারিত সংগ্রহ করেছি; তাতে দেখা গিয়েছে যে এতে ৪১২১ জন অভিযুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ গড়ে প্রতি মামলায় অভিযুক্ত হন ৩.১১ জন। সেই হিসেবে সরকারের দেয়া তথ্যভিত্তিক হিসেব দাড়াবে কমপক্ষে ২১,৭৭০ জন অভিযুক্ত হয়েছেন।
আমাদের গবেষণায় পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে, ৪১২১ জনের মধ্যে আটক হয়েছে ১৪৫৪ জন, অর্থাৎ অভিযুক্তদের মধ্যে প্রায় প্রতি তিনজনের একজন আটক হয়েছেন (২.৮৩ জন)। এই ধারা আমরা যেসব মামলার হিসেব পাইনি সেখানে অব্যাহত না থাকার কোনও কারণ নেই। ফলে আমরা বলতে পারি যে, কমপক্ষে ৭৬৯২ জন আটক হয়েছেন। প্রতিমাসেই গড়ে প্রায় ১৫০ জন করে আটক হচ্ছেন, অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৫ জন আটক হন।
এই আইনে অভিযুক্ত হবার প্রধান কারণ হচ্ছে সাইবার স্পেসে মতপ্রকাশ। নাগরিকদের মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে এটি কত বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা আমরা আমদের গবেষণার তিনটি প্রতিবেদনেই দেখিয়েছি। আমাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এই বছরের জানুয়ারি মাসে (হোয়াট ইজ হ্যাপেনিং : ট্রেন্ডস এ্যাং প্যাটার্ন্স অফ দি ইউজ অব ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট ইন বাংলাদেশ)। এই আইন বাতিল করে দেবার দাবি এই আইন প্রণয়নের সময় থেকেই উঠেছে। মে মাসে বাংলাদেশ সফরের পর জাতিসংঘের চরম দারিদ্র্য এবং মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত অলিভিয়ে ডি শ্যুটার আবারও এই আইন বাতিলের তাগাদা দিয়েছেন। গত বছর জুন মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা পাঠিয়েছিলো তাতে আইনটির দুটি ধারা (২১ ও ২৮) পুরোপুরি বাতিল এবং আটটি সংশোধনের কথা বলা হয়েছিলো। গত ৩১ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক আইনটি অবিলম্বে স্থগিত করা ও সেটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে এর ধারাগুলোতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার আহ্বান জানান। সরকার এই বিষয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এই আইন বাতিলের বিষয় নাকচ করে দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রী পরে বলেছেন ‘দরকার হলে এটি সংশোধন করা যেতে পারে’।
সরকারের পক্ষ থেকে যে সামান্য তথ্য সোমবার সংসদে দেয়া হয়েছে তাতে এই আইনের ব্যাপক ব্যবহারের প্রমাণ স্বীকৃত হয়েছে। এর আগে মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের দলের নেতারা বলে এসেছেন এই আইনের ‘কিছু কিছু অপপ্রয়োগ হয়েছে’। এই আইনে কতজন আটক হয়েছেন, আটকদের কেনো কীভাবে আটক করা হয়েছে, কতোজন বিচারাধীন অবস্থায় আটক আছেন সরকারের পক্ষ থেকে সেই তথ্য প্রকাশ করার কোনও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। মনে রাখা দরকার যে, এই আইন বাংলাদেশ যেসব আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে তার পরিপন্থী। শুধু তাই নয়, গত মাসগুলোতে এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে এবং এই ইঙ্গিতও স্পষ্ট যে, আগামী দিনগুলোতে এর ব্যবহার বাড়বে। ফেসবুক থেকে
News Courtesy:
https://www.amadershomoy.com/opinion/article/59583/%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%89%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%8F%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D