বাংলাদেশের রাজনীতির ১৫ বছরের বৃত্তচক্র
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের দিকে নিবিড়ভাবে তাকালে পনেরো বছরের বৃত্তচক্র দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তিনটি পনেরো বছরের বৃত্তচক্রের পরে বাংলাদেশ এখন দাঁড়িয়ে আছে এক ক্রান্তিকালে, ইংরেজিতে যাকে বলা যায় ‘ক্রসরোডস’।
১৯৭৫ সালের ঘটনাবহুল, রক্তাক্ত এবং ভয়াবহ ঘটনাপ্রবাহের সূচনা হয়েছিলো জানুয়ারি মাসে দেশের সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে। একদলীয় ব্যবস্থার সূচনার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের অবসান দেশে নতুন শাসন ব্যবস্থার শুরু করেছিলো। সেটা ছিলো বেসামরিক কর্তৃত্ববাদ, আগস্ট মাসে তার রূপান্তর ঘটলো সেনাশাসন বা সামরিক কর্তৃত্ববাদে। ক্ষমতার পালাবদলের এই রক্তাক্ত ধারা অব্যাহত থেকেছে বছরের শেষ পর্যন্ত। পরের পনেরো বছর দেশে চলেছে এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসন। ঠিক পনেরো বছর পরে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সামরিক কর্তৃত্ববাদের এই পর্বের সমাপ্তি ঘটে – বাংলাদেশ নির্বাচনী গণতন্ত্রে প্রবেশ করে।
পরের পনেরো বছর দেশে দুর্বল এবং ভঙ্গুর গণতন্ত্র অব্যাহত থেকেছে, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলের ভেতরে ক্ষমতার হাত বদল ঘটেছে। ২০০৬ সালের শেষ নাগাদ এসে এই অধ্যায়ের অবসান ঘটে। নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধীদের সংঘাতের ফলে ক্ষমতার কেন্দ্র বদলের ঘটনা ঘটে।
পরোক্ষ সেনাশাসনের আওতায় দেশ কাটিয়েছে দুই বছর। ইংরেজিতে একে বলে ‘ইন্টেরেগনাম – অন্তর্বর্তী সময়।
২০০৮ সালের শেষে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনঃযাত্রার সূচনা হয়। পরবর্তী পনেরো বছরে বাংলাদেশের যাত্রা ক্রমেই গণতন্ত্রের উল্টোদিকে। গণতন্ত্র বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক দেশ বলতে রাজি নয়। যেমন স্টকহোম ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি এ্যান্ড ইলেকটোরাল এসিস্টেন্স (আইডিইএ) বাংলাদেশেকে চিহ্নিত করে ‘অটোক্রেসি’ (‘স্বৈরতন্ত্র) বলে; জার্মানীর গবেষণা প্রতিষ্ঠান বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশনের হিসেবে বাংলাদেশ হচ্ছে ‘মাইল্ড অটোক্রেসি’ (‘নমনীয় স্বৈরতন্ত্র’) সুইডেনের গথেনবার্গ-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসি ইন্সিটিটিউট বাংলাদেশকে বলছে ‘ইলেক্টোরাল অটোক্রেসি’ (‘নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র’)। বাংলাদেশ এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে পনেরো বছরের যাত্রায়।
পনেরো বছর সেনাশাসন এবং পনেরো বছরের গণতন্ত্র পেরিয়ে গত পনেরো বছরে বাংলাদেশ এখন এসে দাঁড়িয়েছে ‘অটোক্রেসি’তে।
বাংলাদেশের রাজনীতির চতুর্থ পনেরো বছরের চক্রের সূচনা হবে ২০২৩-এর শেষ কিংবা ২০২৪-এর শুরুতে। এই সময়েই দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। নির্বাচনের প্রশ্নে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রকমের তৎপরতা আছে, আছে অনিশ্চয়তা, আছে সংশয়।
[লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট। লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া]
News Courtesy:
https://mzamin.com/news.php?news=63129&fbclid=IwAR2qzUhoxXrrMJbkUi3wwOI9uyQFxOzlnSAYcsje7CZvJNlpeJFdcuvzrAU