কোনও আইনের নাম বাদ দিলে বা নাম বদলে দিলেই তার মর্মবস্তু বদল হয়না

কোনও আইনের নাম বাদ দিলে বা নাম বদলে দিলেই তার মর্মবস্তু বদল হয়না

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ২০১৮ ‘বাতিলের’ জন্যে মন্ত্রিসভায় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রচার করা হলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন আইনের ‘সংশোধন’ হচ্ছে। কোনও আইনের নাম বাদ দিলে বা নাম বদলে দিলেই তার মর্মবস্তু বদল হয়না, সেটা সরকার, জনগণ এবং ভুক্তভোগী সকলেই জানেন। ফলে ডিএসএ বাতিল হচ্ছে এবং তাতে করে ‘বড় ধরণের সাফল্য হয়েছে’ কিংবা ‘সদাশয় সরকার আমাদের কথা শুনেছেন’ ফলে এই সরকার জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে যারা প্রচারে অংশ নিচ্ছেন তাঁদের প্রতি অনুরোধ আরেকটু অপেক্ষা করুন। কথিত প্রস্তাবিত আইনের বিষয়ে আসলে কিছু জানানো হয়নি।

আইনমন্ত্রী এই না-জানা আইনের কয়েকটি দিক নিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন সেখানে বলা হচ্ছে কিছু কিছু ধারায় শাস্তির মেয়াদ কমানো হয়েছে, কিন্ত নাগরিকদের যে মৌলিক অধিকারগুলোকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে সেগুলো বাতিল বা সংশোধন করা হচ্ছেনা। ফলে এই বিষয়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যে সব ধারা বাতিলের কথা বলা হয়েছিলো তার ধারেকাছেও সরকার গেছেন বলে আইনমন্ত্রীর কথায় ইঙ্গিত নেই। তদুপরি সাংবাদিকদের ‘আশ্বস্ত’ করার একটা চেষ্টা হচ্ছে এই নতুন আইন/সংশোধনীতে। সাংবাদিকরা নাগরিকদের চেয়ে আলাদাভাবে বিবেচিত হতে পারেন না, আইনের চোখে সমতার সাংবিধানিক ধারণার সঙ্গে তা অসঙ্গতিপূর্ণ। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে আইনমন্ত্রীর এই কথা “‘আগেও বলেছি, এখনো বলছি আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসবে, সেই অধিবেশনে বিলটি সংসদে পেশ করা হবে।’ সেই অধিবেশনে আইনটি পাস হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন” (প্রথম আলো অনলাইন, ৭ আগস্ট ২০২৩)। যে আইনের খসড়া বিষয়ে অংশীজনেরা কিছুই জানেন না, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা পর্যন্ত করা হয়নি সেই আইন দেড় মাসের মধ্যে পাশ হবার আশা থেকে কী ইঙ্গিত মেলে?

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আইসিটি এ্যাক্টের সংশোধনী হয়েছিলো ২০১৩ সালে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে চালু হয়েছিলো ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট ২০১৮। এখন সরকার বিভিন্ন ধরণের চাপের মধ্যে আছে, এই আইনের ব্যাপারে একটা আইওয়াশ দিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজকে এটা বোঝানো দরকার যে সরকার মতপ্রকাশের ব্যাপারে নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা থেকে সরে আসছে।

অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে। যে আইন নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করে, অংশীজনের মতামত না নিয়ে, এতদিন ধরে চালু থাকা ভয়াবহ নির্যাতনের হাতিয়ারকে কার্যত চালু রেখেই নতুন নাম দেয়া হচ্ছে সেই বিষয়ে সকলের উচিত সাবধানতা অবলম্বন করা।
[লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট। লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া]

News Courtesy:

https://mzamin.com/news.php?news=68399&fbclid=IwAR2aItuVxb9RA31dV-AyNojAuATiHybP9LX-1us1i-rv3I5YMavnJRMkU_w

An unhandled error has occurred. Reload 🗙