দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একা চলবে না একসঙ্গে?

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘বে অফ বেঙ্গল কনভারসেশন’ এর দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একসঙ্গে চলার পরামর্শ দিয়েছেন কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা। বলেছেন, এই অঞ্চলের মানুষের অভিন্ন স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে হবে দেশগুলোকে। অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের রাজনীতিবিদ, মন্ত্রীসহ বিভিন্ন পেশার সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং লেখকরা অংশ নেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একা চলবে নাকি একসঙ্গে চলবে বিভিন্ন আলোচনায় সে প্রশ্ন ঘুরেফিরে উঠে এসেছে আলোচনায়। সকালে প্লেনারি সেশনে বেলজিয়াম ভিত্তিক ‘সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরাম’ এর গবেষণা পরিচালক সিগফ্রিড ওল্ফ বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলোকে শুধু ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না, বঙ্গোপসাগরের বাইরেও তাকাতে হবে। পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত আইজাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সার্ক কাজ করেনি। দক্ষ কূটনীতিই এই অঞ্চলের সকল দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সকলের একত্রে কাজ করা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 

ভারতের বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সম্মানীয় ফেলো এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত অনীল কুমার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের প্রতিযোগিতা বাস্তবতা এবং ইন্দো প্যাসিফিক হলো তার মঞ্চ। চীন ভারতকে এশিয়ার মধ্যেই ব্যস্ত রাখতে চায় মন্তব্য করে অনীল বলেন, বিআরআই (চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) বা অন্য উদ্যোগগুলো নিরীহ বা সাধারণ কোনো উদ্যোগ নয়। দক্ষিণ এশিয়া বর্তমানে রাজনীতি, অর্থনীতি চর্চার কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সকলের একত্রে কাজ করা প্রয়োজন।

আমাদের মূল একই। পারস্পরিক সম্মান, সমঝোতা, আগ্রহের বিষয় নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। এই উপমহাদেশে সংকটকে ষড়যন্ত্র বলার প্রবণতা সমাধানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পারস্পরিক সহযোগিতাই পারে সম্পর্কে উন্নতি নিয়ে আসতে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একা চলবে নাকি একসঙ্গে চলবে সে প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতি অনেকাংশে সমাধান করা সম্ভব। আঞ্চলিক সাহায্য-সহযোগিতা এই অঞ্চলের জন্য আবশ্যক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্ক থাকলেও এর কার্যকারিতা নেই। সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফাইজ আহমাদ বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, অবিভাজ্য আচরণই পারে এই অঞ্চলে শান্তি নিয়ে আসতে। সার্কের নিষ্ক্রিয়তা এই অঞ্চলে সমস্যা বাড়িয়েছে এবং এ থেকে উত্তরণের জন্য সত্যিকারের নেতৃত্ব দরকার যা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক উভয় অংশেই কাজ করবে। এই অঞ্চলকে বহিঃবিশ্ব সবসময়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে।

মাসুদ বিন মোমেন  বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এখনো নিজেদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারেনি। কানেক্টিভিটি ছাড়া টেকসই উন্নতি সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল কানেক্টিভিটির দিক থেকে খুব পিছিয়ে। বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন টেকসই হয় না। এমনকি উত্তর কোরিয়াও বলে যে তারা গণতান্ত্রিক। একটি দেশ গণতান্ত্রিক কিনা সেটি বড় প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হলো দেশের সরকার গণতান্ত্রিক কিনা, দেশে সুশাসন আছে কিনা। অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে, কোনো দেশে গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে সেখানে অধিক উন্নয়ন হয়। রাষ্ট্রদূত লি একটি গবেষণার ফল প্রদর্শন করে দেখান যে, বে অফ বেঙ্গল দেশগুলো গণতন্ত্রের দিক থেকে মধ্যম মানের। মানবাধিকারের মানদণ্ডগুলোতেও দেশগুলোর অবস্থান তলানিতে।

মালদ্বীপের শিক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. আবদুল্লা রশিদ বলেন, আধুনিক বিশ্বে শ্রমবাজারের চাহিদা পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন নতুন টুলস, নতুন নতুন প্রযুক্তি আমাদের দ্বারে দ্বারে আসছে কিন্তু যদি তা ভালোভাবে বণ্টন না করা হয় তাহলে সমতা নিশ্চিত করা যাবে না এবং উন্নয়নের অগ্রগতি টেকসই হবে না। শিক্ষার আধুনিকীকরণ গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু শিক্ষার সুযোগের সুষম বণ্টন আগে নিশ্চিত করতে হবে।

News Courtesy:

https://mzamin.com/news.php?news=30920&fbclid=IwAR3O_9LRgkA_dgnjyB5qqFUM2UhNVJASg8AQb4ahrhqyD619s-Q-BaFyLxI

An unhandled error has occurred. Reload 🗙