বহুদলীয় গণতন্ত্র কার্যকরে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন
রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য জনকল্যাণ এবং নিয়মতান্ত্রিকতা হলেও, বর্তমান বাংলাদেশে সেই ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এদেশে মত প্রকাশ এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার বিভিন্ন আইনের মাধ্যমে সংকুচিত করা হয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো রাজনৈতিক দল থাকলেও এদেশে ‘কার্যকর বহুদলীয় গণতন্ত্র’ নেই। বহুদলীয় গণতন্ত্র কার্যকরের জন্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন বলে তাদের অভিমত। এছাড়াও আসন্ন আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কারা এবং কীভাবে অংশগ্রহণ করছে, তার ওপর এদেশের কার্যকর বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্ধারিত হবে বলে তারা মনে করছেন।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম জুমে ‘বাংলাদেশ রাজনীতি: কোথায় দাঁড়িয়ে, গন্তব্য কোথায়?’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারে তারা এসব কথা বলেন। ‘ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ- এফবিএস’ এর আয়োজন করে।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ও আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো আলী রীয়াজ। সাংবাদিক মনির হায়দারের উপস্থাপনায় আলোচনা করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ অধ্যাপক বীনা ডি কস্টা এবং সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল।
এছাড়া অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আসাদুল্লাহ, মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দিলরুবা শারমিন প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশে কার্যকর একটা বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সেটা নির্ধারিত হবে আগামী নির্বাচনে কারা এবং কীভাবে অংশগ্রহণ করছে তার ওপর। রাজনীতিতে অনেক দলের উপস্থিতিই ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র’ প্রমাণ করে না। গণতন্ত্রের অন্যান্য উপাদান বাদ দিলেও বলা যায় ক্ষমতাসীনদের নির্ধারিত সীমানার ভেতরে অনেক দলের উপস্থিতি বহুদলীয় ব্যবস্থা নয়। রাশিয়ায় অনেক দল রয়েছে, কম্বোডিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এবং তুরস্কেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যা ঘটছে, তা অন্যরকম ইঙ্গিত দেয়। আমি মনে করি, বহুদলীয় ব্যবস্থা থাকা না থাকার প্রশ্নটাই আসলে আগামী নির্বাচনের আগের এবং নির্বাচনকালীন পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনীতি কোনো জড়বস্তু নয়। রাজনীতি হলো সমস্যা সমাধানের উপায়, মানুষের কল্যাণ। কিন্তু বর্তমানে এদেশে রাজনীতির লক্ষ্য জনকল্যাণ নয়, বরং ক্ষমতায় যাওয়া এবং টিকে থাকা। একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কতগুলো প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে ক্ষমতায় যাওয়া এবং মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত থাকা-এই রীতিটা ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে যেই রাজনৈতিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সুশাসনের ঘাটতি এবং অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে একটা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে। যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি অর্জন করতে হলে রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। একইসঙ্গে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীর সংস্কার প্রয়োজন।
বীনা ডি কস্টা বলেন, বাংলাদেশে আন্দোলনের জায়গাটা দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কঠোর আইনে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন আইন এবং নিষেধাজ্ঞাকে বিভিন্নভাবে অল্প হিসেবে ব্যবহার করে এদেশে আন্দোলনের অধিকারকে সংকুচিত করা হয়েছে। নির্বাচনে এই বিষয়গুলো আমাদের চিন্তার ওপর প্রভাব ফেলবে যে, কোথায় আমাদের দেশের রাজনীতি কোথায় যাচ্ছে, কীভাবে যাচ্ছে।
News Courtesy: