বাইডেনের ‘গণতন্ত্র সম্মেলন’-এ বাংলাদেশ দাওয়াত পাচ্ছে না কেন?

বাইডেনের ‘গণতন্ত্র সম্মেলন’-এ বাংলাদেশ দাওয়াত পাচ্ছে না কেন?

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ‘গণতন্ত্রের জন্যে শীর্ষ সম্মেলন’-এ এবারও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যদিও পাকিস্তান রয়েছে সে তালিকায়। এ নিয়ে প্রবাসের সুধীজন এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে যে, তাহলে বাইডেনের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী। উল্লেখ্য, এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২৯-৩০ মার্চ ওয়াশিংটন ডিসিতে। প্রথম গণতন্ত্র সম্মেলন হয়েছে ২০২১ সালের ৯-১০ ডিসেম্বর। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হিসেবে হোয়াইট হাউস উল্লেখ করেছে, ইতিহাস এবং সাধারণ জ্ঞান আমাদের বলে যে, স্বাধীনতা,সুযোগ এবং ন্যায় বিচার গণতান্ত্রিক সমাজের বিকাশ ঘটায় স্বৈরাচারে নয়। এই ব্যাখ্যার সাথে পাকিস্তান কতটুকু মানানসই। বাংলাদেশইবা কতটা বেমানান।

এমন প্রশ্নের অবতারণা প্রসঙ্গে খ্যাতনামা রাষ্ট্র বিজ্ঞানী এবং বর্তমানে সুইডেনে ভি-ডেম ইন্সটিটিউটের (ভ্যারাইটিজ অব ডেমক্র্যাসি) ভিজিটিং ফেলো ড. আলী রীয়াজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে দাওয়াত পেয়েও পাকিস্তান যোগদান করেনি। এবার তারা হয়তো করবে। গত দেড়-দুই বছরে পাকিস্তানের বিচার বিভাগ এবং গণমাধ্যম বেশ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। এছাড়া ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় পাকিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে বাইডেন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক রয়েছে, তা কখনো খুব ভালো, আবার কখনো কিছুটা দুর্বল হয়ে থাকে। ড. আলী রীয়াজ বলেন, যেসব কারণে ২০২১ সালে বাংলাদেশ দাওয়াত পায়নি, একই পরিস্থিতি এখনও বিরাজ করছে বাংলাদেশে। মোটেই উন্নতি ঘটেনি। দেশে দেশে বিরাজিত কর্তৃত্ববাদ মোকাবিলায় সম্মিলিত একটি প্রয়াস চালানোর অভিপ্রায় থেকেই হয়তো এমন শীর্ষ সম্মেলন করা হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ যে এবারও আমন্ত্রণ পায়নি তা খুব বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। আমন্ত্রণ পাবার জন্য যে সব শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন ছিল তা হয়নি বলেই বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি বলেই আমার মনে হচ্ছে।

মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত এটর্নী অশোক কর্মকার এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভূ-রাজনৈতিক কৌশলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন হয়তো পাকিস্তানের প্রতি নমনীয়। পাকিস্তান জঙ্গি পুষছে, সীমাহীন দুর্নীতির ভিকটিম হয়েছে আপামর জনতা। অপরদিকে, বাংলাদেশ যে মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে অসাধারণ অগ্রগতি সাধন করেছে, আইনের শাসনের ক্ষেত্রেও কিছুটা অগ্রগতি (ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারিদের বিচার ছাড়া) সাধিত হয়েছে, এতদসত্বেও কেন আমন্ত্রণ পায়নি সেটি বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। আমার ধারণা-এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈদেশিক নীতির ব্যর্থতা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেভাবে কাজ করে সেটি হয়তো হোয়াইট হাউসকে কনভিন্স করতে পারছে না। এটর্নী অশোক উল্লেখ করেন, কোন রাষ্ট্রই পুরোপুরি নীতির ভিত্তিতে চলতে পারে না। অনেক দেশই আর্থিক সংকটে পড়েছে নানাবিধ অব্যবস্থাপনার জন্যে। তবে পাকিস্তান পারমানবিক শক্তিসম্পন্ন হওয়ায় হয়তো আমন্ত্রণ পাচ্ছে।

পাকিস্তানের মত মেরুদন্ডহীন দুনীতির অভয়ারণ্য, জঙ্গিবাদের পৃষ্টপোষক রাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রকারান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক কৌশলকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম বিশ্লেষক ড. মোস্তফা সারোয়ার। ড. সারোয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ এবং র‌্যাবের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভেশন আছে এটি সকলেই জানি। এছাড়া গত দুটি পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়েও বাইডেন প্রশাসন নাখোশ বাংলাদেশের ওপর। ড. সারোয়ার উল্লেখ করেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে ডিজিটাল আইন। ড. সারোয়ার উল্লেখ করেন, চীনের সাথে পাকিস্তানেরও সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। তবুও পাকিস্তান আমন্ত্রণ পেয়েছে। ড. সারোয়ার বিশেষভাবে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মত শক্তিশালী একটি দেশের সাথে বৈরী সম্পর্ক তৈরী হতে পারে-এমন মতামত/মন্তব্য করা উচিত নয়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কৌশলী হলেও তার মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যই আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে আসছেন।
নিউজার্সির মনমাউথ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সোস্যাল ওয়ার্কের অধ্যাপক ও পিএইচডি প্রোগ্রামের পরিচালক অধ্যাপক ড. গোলাম মাতবর মনে করেন, বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে বাইডেন প্রশাসন সঠিক দায়িত্বটি পালনে সক্ষম হয়নি। গণতন্ত্রের হান্ড্রেড পার্সেন্ট রীতি কেউই মেনে চলেন বা চলতে পারেন বলে আমি মনে করি না। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে কারো কারো অনেক প্রশ্নের অবতারণা হতেই পারে। তবে গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রে পরিণত হতে বাংলাদেশ গত এক যুগের অধিক সময়ে অনেক কাজ করেছে। চেষ্টায় কোন ক্রুটি আছে বলে মনে করি না। বিএনপি নির্বাচনে যায়নি বলেই কী গণতন্ত্র নেই? ড. মাতবর বিস্ময়ের সাথে উল্লেখ করেন, বাইডেনের ফরেন পলিসিতে বড় ধরনের গড়মিল রয়েছে- এটি আমি আগেও বলেছি। পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানানোতে দোষের কিছু আমি দেখি না। বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে প্রকারান্তরে বাইডেন প্রশাসন তার ‘গণতন্ত্র সম্মেলন’কেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করছি। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালি করতে বাংলাদেশ যেভাবে চেষ্টা করছে, তাকে আরো উৎসাহিত করার অভিপ্রায়েই এবারের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল।

স্টেট ইউনিভার্টি অব নিউইয়র্কের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বীরুপাক্ষ পাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে কোন বিষয়েই মানদন্ড নিরূপণের সূচক রয়েছে। যেমন অর্থনীতি, মানবাধিকার, ইত্যাদি। গণতন্ত্রের মানদন্ড নিরূপণের সুনির্দিষ্ট কোন সূচক হয়তো নেই। হোয়াইট হাউস সেটি নির্ণয় করছে পারসেপশনের ভিত্তিতে। তবে ২০২১ সালের গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত না পাবার পর কতগুলো বিষয়ে বাংলাদেশকে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন ছিল। এর অন্যতম হচ্ছে অর্থনৈতিক কূটনীতি এবং সামগ্রিক কূটনৈতিক দক্ষতা। এ দুটি বিষয়ে খুবই অবহেলা দৃশ্যমান হয়েছে কয়েকজন মন্ত্রী এবং রাজনীতিকের লাগামহীন মতামত/মন্তব্য/বক্তব্যে। অপরদিকে, পাকিস্তান সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এমন কোন মন্তব্য গত বছরাধিককালের মধ্যে কখনো শোনা যায়নি যা হোয়াইট হাউসেক্ষোভ সঞ্চার করতে পারে। পাকিস্তানের কোন নেতা অথবা মন্ত্রীরা লাগামহীন কথা বলেননি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।

ড. পাল উল্লেখ করেন, রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্ক অনেক গভীর। তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে। এজন্যে ভারতের রাশিয়া প্রীতি যুক্তরাষ্ট্রের সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
ভার্চুয়াল এবং সশরীরে অংশগ্রহণ করা যাবে আসন্ন সম্মেলনে।

News Courtesy:

https://nypratidin.com/archives/11012?fbclid=IwAR1SpEpCIyZwVdkint1zXMEOcJ2h0cLzMLTLia-N5rqaI1TB32L0H8Lm_qk

An unhandled error has occurred. Reload 🗙