বিদ্যমান সংবিধান এক ব্যক্তির শাসনের পথ তৈরি করেছে
আলী রীয়াজ। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোর অন্যতম সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ইতিমধ্যে সংস্কার নিয়ে তার কমিশন প্রধান উপদেষ্টাকে একটি প্রস্তাবনাও দিয়েছে। যে প্রস্তাবনার আলোকে আলোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের মধ্যে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলোর যৌক্তিকতা কী, আগের সংবিধানে গলদ কোথায় ছিল- এসব বিষয়ে কথা বলেছেন ‘জনতার চোখ’-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: দেশের নাম পরিবর্তন করে জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। সংবিধান সংস্কার কমিশন কেন এটি পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করছে?
আলী রীয়াজ: দু’টো কারণে। এক নম্বরে রিপাবলিক শব্দের বাংলা ‘প্রজাতন্ত্র’ বলে আমাদের কাছে সঠিক মনে হয় না। প্রজা কথাটার মাঝে এক ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব আছে। আর ইংরেজি নামটা হচ্ছে পিপলস রিপাবলিক। সেই ক্ষেত্রে আমরা জনগণের কথাটা আগে আনতে চেয়েছি। তদুপরি বাংলাদেশের ইতিহাস যদি আপনি দেখেন, ১৯৬৯ সালে যখন প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা বলা হয় তখন কিন্তু ‘জনগণতান্ত্রিক স্বাধীন পূর্ব বাংলা’র কথাই বলা হয়েছে। আমরা যেটা প্রস্তাব করেছি সেটার ভিত্তি হচ্ছে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা।
প্রশ্ন: জাতি হিসেবে বাঙালি কেন পরিবর্তন করতে বলছে কমিশন?
আলী রীয়াজ: জাতি হিসেবে সবাই বাঙালি হওয়া তো অবাস্তব। সকলকে আপনি বাঙালি বানানোর চেষ্টা করছেন কেন? এটার মধ্যে এক ধরনের জাতিবাদী চেতনা থাকে- যে আমাদের সবাইকে বাঙালি হতে হবে। বাংলাদেশ একটা বহুজাতিক দেশ। এখানে বহু জাতি, বহু ধর্ম, বহু ধরনের মানুষ আছে। আমরা কেউ সমতলে থাকি, কেউ পাহাড়ে থাকি। আমরা এক ধরনের বিশ্বাসের মধ্যে থাকি। কিন্তু জাতিগতভাবে বড় জাতির পরিচয় চাপিয়ে দেয়া তো অগ্রহণযোগ্য। আমরা কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে যে পরিচয় বিদ্যমান সংবিধানে আছে তাই রেখেছি। আমরা বলছি যে, জাতি হিসেবে যিনি চাকমা, মারমা, গারো, তারা কিন্তু বাঙালি না। তাহলে সাংবিধানিকভাবে জোর করে আপনি বাঙালি বলছেন কেন? আমরা মনে করি, সেটা সঠিক নয়। আমাদের অংশীজনরা যারা এসেছেন তারাও এটা বলেছেন। এটা সঠিক নয়। আমরা নাগরিকের পরিচয় নিয়ে কোনো প্রশ্নই তুলিনি, এটা আমাদের পরামর্শও নয়। সেটা সংবিধানে সঠিক আছে- বাংলাদেশের নাগরিকরা বাংলাদেশি বলে পরিচিত হবেন।
প্রশ্ন: রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ বাদ দেয়া কেন জরুরি বলে মনে করছেন, আর বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী?
আলী রীয়াজ: আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের প্রতিশ্রুতিতে ফিরে যেতে চেয়েছি। আমাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে- প্রথম সংবিধান যেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। সেখানে প্রতিশ্রুতি ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার। আমরা মনে করি, এটাই রাষ্ট্রের মূলনীতি হওয়ার কথা ছিল। ১৯৭২ সালে এটাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এটা আমাদের কাছে মনে হয়েছে অগ্রহণযোগ্য। দ্বিতীয়ত আপনি যদি দেখেন যে, চারটা মূলনীতির কথা বলা হয়েছে- গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রের কথা। এ চার নীতি প্রকৃতপক্ষে একটি দলীয় নীতি। সেটাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিবর্তন করা হয়। এটার উদাহরণ হচ্ছে এই যে, বাংলাদেশের সংবিধান লেখা শেষ হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বলা হচ্ছিল এগুলো চারটি মূলনীতি। তখনো কিন্তু ড্রাফটিং হয়নি। তাছাড়া এই চার নীতি যে আদর্শের লক্ষ্য সেটা হচ্ছে মুজিববাদ। সেই মুজিববাদের পরিণতি কী হয়েছে আমরা জানি। একবার যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে একদলীয় ব্যবস্থা ও এক ব্যক্তিতান্ত্রিক একটা স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে গেছি। সে সময় এক নেতায় এক দেশে পরিণত করা হয়েছিল। আবার আওয়ামী লীগের সেই চার নীতির ভিত্তিতে একটা স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে গেছি। আবার দেশে একনায়কতান্ত্রিক একটা শাসনব্যবস্থা তৈরি হয়। মানুষকে প্রাণ দিতে হয়। তাহলে সংবিধানের এগুলো রাখার কোনো যৌক্তিকতা আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। এখানে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নটা অনেকেই তুলছেন। আমরা প্রস্তাব করেছি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে ভিত্তি, তিনটাকে আমরা যুক্ত করতে বলেছি। আমরা চতুর্থ প্রস্তাবে বলেছি গণতন্ত্রের কথা। কারণ গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার জন্যই বাংলাদেশের মানুষ লড়ে যাচ্ছে। গত ১৬ বছর লড়েছে, অতীতে লড়েছে। আর যেটা বলেছি বহুত্ববাদের কথা। কারণ বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে একটা বহু জাতের সমাজ। এটা বলার মধ্যদিয়ে যেটা হয় সেটা হচ্ছে ধর্মের বাইরেও আমরা চলে যাচ্ছি। একটি ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন রকমের জাত-পাত আছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, বহুত্ববাদী সমাজ সমস্ত ভিন্নতাকে ধারণ করতে পারে। শুধু ধারণ করে না, সম্মানের সঙ্গে ধারণ করে। কেউ যেন রাষ্ট্রের চোখে অসমভাবে বিবেচিত হতে না পারে। আমরা বলছি- আমাদের দ্বিতীয় মূল আদর্শ মানবিক মর্যাদা। তাহলে মানবিক মর্যাদাকে আমরা যেন আরও বিশালভাবে দেখতে পারি। সকলকে যেন অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। সেটা শুধু ধর্মের ভিত্তিতে নয়, জাতির ভিত্তিতে, সংস্কৃতির ভিত্তিতে। হিন্দু ধর্মের মধ্যেও তো বিভিন্ন রকম জাত-পাত আছে। ইসলাম ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন রকম মাযহাব আছে। তাহলে সবকিছুকে আমরা ধারণ করতে চাই। বাংলাদেশের মধ্যে এটা শত শত বছর ধরে আছে। আমরা বলছি যে, আসুন সবাইকে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসি। রাষ্ট্র সকলকে সমান মর্যাদায় যেন অভিষিক্ত করতে পারে।
প্রশ্ন: মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে ভোটাধিকার, ইন্টারনেট ও তথ্য প্রাপ্তি, ভোক্তা সুরক্ষা, গোপনীয়তাসহ বেশ কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
আলী রীয়াজ: গণতান্ত্রিক সমাজে ভোটের অধিকার হচ্ছে একটা মৌলিক অধিকার। খুব বিস্ময়কর যে, এখনকার বিদ্যমান সংবিধানে সেটা নাই। আমরা দেখেছি এই মৌলিক অধিকারটা কীভাবে লুণ্ঠিত ও লাঞ্ছিত হয়েছে। আমরা যে আদালতে গিয়ে বলবো যে, আমার অধিকার লুণ্ঠিত হয়েছে। আমার অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছে। আদালত যদি এটা আমাকে বলতো যে, এই অধিকার তো আপনার ছিলই না। আমরা মনে করি ভোটাধিকার একটা নাগরিকের থাকতেই হবে। রিপাবলিক যদি আপনি তৈরি করেন সেখানে অধিকারটা থাকতেই হবে। ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারের কথা আমরা বলছি এই কারণে যে, আজকের যুগে তথ্যপ্রাপ্তির একটা বড় জায়গা হচ্ছে ইন্টারনেট। বেশিদিন আগের কথা না, এই জুলাই মাসে কী পরিস্থিতি হয়েছিল সেটা কি আমরা জানি না। সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে এখানে একটা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এগুলো তো অধিকার মানুষের। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সংবিধানেও আপনি যদি দেখেন এগুলোকে একেবারে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। একটা গণতান্ত্রিক সমাজের নাগরিক হিসেবে এগুলো আমাদের পাওয়ার কথা।
প্রশ্ন: নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ন্যূনতম বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ করার প্রস্তাব করেছেন, এটি কি খুব আরলি হয়ে যাচ্ছে? আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে এটা করা হয়েছে কি-না?
আলী রীয়াজ: কাউকে সুবিধা দেয়ার জন্য এটি করা হয়নি। বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফির দিকে তাকান দেখবেন বিশাল সংখ্যক তরুণ। তাদের কীভাবে রাজনীতিতে আনবেন। তাদের কণ্ঠস্বর কি শুধু রাজপথেই থাকবে না সংসদেও আসবে। আমরা সেই পথটা আনতে চাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি তাদের যেন প্রতিবার রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবির কথা বলতে না হয়। জুলাই মাসের আন্দোলনেও সমাজের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে বেশির ভাগ তরুণ মাঠে নেমে এসেছেন। তারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৯০-এর আন্দোলনেও একই বিষয় ছিল। তাদের সেই কণ্ঠস্বর কি শুধু রাজপথে থাকবে, কেন তারা আইন প্রণয়নে যুক্ত হতে পারবে না। তাদের আইন প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত করুন। কারণ ভবিষ্যৎ রাজনীতিটা তারাই করবে। কোন ধরনের দেশ তারা দেখতে চান তাদের সেই জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। স্থায়ীভাবে বলার জায়গাটা করে দিতে হবে। এর মানে তো এমন না যে, ৩০০ আসনে সবাই ২১-২২ বছর বয়সে নির্বাচন করবেন। আমরা কেবল পথটা তৈরি করে দিতে চেয়েছি। যেন তরুণদের অংশগ্রহণটা নিশ্চিত করা যায়। রাজনৈতিক দলের কাছেও আমাদের আহ্বান থাকবে যে আপনাদের এক দশমাংশ পারলে তরুণ দেন। যেন তরুণদের অংশগ্রহণের একটা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকে। আমরা আশা করছি, রাজনৈতিক দলগুলো এটা বিবেচনায় নেবে। বিশেষ কারও পক্ষপাতের ব্যাপার নেই। কে সংসদে আসবে- সেটা জনগণ নির্ধারণ করবে।
প্রশ্ন: আইনসভার স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতি বিরোধী দল থেকে মনোনীত করার প্রস্তাব করেছেন। বাস্তবায়ন কতোটুকু সম্ভব বলে মনে করেন?
আলী রীয়াজ: আমরা আশাবাদী। করবেনই এমন মনে করার কারণ নেই। কারণ শেষ পর্যন্ত সরকার আলোচনা করবেন, রাজনৈতিক দলগুলোও এ বিষয়ে তাদের মত দেবে। তবে এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে জবাবদিহিতা। স্থায়ী কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারি করে। আমরা দেখেছি এ নজরদারিটা নেই। সেটি গত বছরগুলোতেই নয়, আমরা যদি দেখি একেবারে শুরু থেকেই ছিল না। আমাদের সংবিধানে এতটা শক্তিশালী বিষয় নেই যে, কমিটিগুলো নজরদারি করবে। তাই আমরা নজরদারির কথা বলেছি। একটা স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থায় সরকারের তো কোনো বিষয় লুকানোর কথা না। তাদের প্রতিনিধিও তো থাকবেন। তারা চাইলে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোর প্রধানদের ডাকতে পারবেন। এ ছাড়া সারা পৃথিবীতে যেখানে ওয়েস্ট মিনিস্টার স্টাইলে সরকার আছে সেখানে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসসি) সব সময় বিরোধী দলের হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে যাতে করে সরকারের ওপর একটি নজরদারি ব্যবস্থা থাকে। আমরা এ নজরদারি বাড়াতে চাচ্ছি।
প্রশ্ন: অর্থ বিল ছাড়া অন্যসব বিলে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার প্রস্তাব রেখেছেন।
আলী রীয়াজ: বাংলাদেশের সংবিধানে যে ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের কোনো ব্যবস্থা নেই। বৃটেনে দেখেন সর্বশেষ কতোজন প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে। দল ক্ষমতায় আছে কিন্তু ব্যক্তি সরে যেতে হয়েছে। কারণ সে সব দেশে ঐরকম ব্যবস্থা তারা গড়ে তুলেছে। আমাদের সংবিধানের আর্টিকেল ৭০-এ সে রকম ব্যবস্থা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অপসারণ মানেই তো সে দল ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়া নয়। কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ২/৪ জন চলে গেলেন। কিন্তু দল ক্ষমতায় থেকেছেন। আমরা জবাবদিহিতার জায়গা থেকে এটা অপসারণের জন্য বলেছি। প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহিতার আওতায় থাকতে হবে, এমনকি তার নিজ দলের কাছেও জবাবদিহি থাকতে বাধ্য হবে। বাজেটের বিষয়টা পুরোপুরি লোয়ার হাউজের, কোনোভাবেই এটা আপার হাউজে যাবে না। জনগণকে কোনোভাবেই জিম্মি করা যাবে না। একটা দল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আছে। কিন্তু তার কিছু সদস্য বাজেটের বিপক্ষে ভোট দিলো তাহলে তো বাজেট আটকে যাবে। জনগণ ভোগান্তির শিকার হবে। তাই এক্ষেত্রে আমরা বলেছি, না অর্থ বিলে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেয়া যাবে না।
প্রশ্ন: উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্যদের ক্ষেত্রে নানা প্রস্তাবনা থাকলেও সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য কোনো সংরক্ষিত আসনের কথা বলা হয়নি। যদিও দাবিটি পুরনো?
আলী রীয়াজ: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শব্দটিই আপত্তিকর। আমরা যে উচ্চকক্ষে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে ৫ জনের মনোনয়নের কথা বলেছি- আশা করছি প্রেসিডেন্ট সেটি বিবেচনায় নেবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে আমরা বলেছি যে, তারাও যেন ৫ শতাংশ সমাজে বঞ্চিত শ্রেণি থেকে মনোনয়ন দেয়। কিন্তু তালিকায় তো সবাইকে যুক্ত করা যাবে না। যুক্ত করতে গেলে এটা তো অনেক লম্বা হয়ে যাবে। আমাদের সেন্সটা হলো যারা সুবিধাবঞ্চিত, যাদেরকে আমরা সংখ্যালঘু বলি। শুধু সংখ্যালঘুর বিষয়টি একটি ধর্মীয় বিষয় হয়ে যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের সংসদে দলিতদের প্রতিনিধিত্ব থাকুক এটি চাই। এই সমাজে তাদের একটা স্টেক আছে। তাহলে এ রকম অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত আছে। আমরা বলছি রাষ্ট্রপতি যখন দেবেন তখন এবং রাজনৈতিক দল যখন দেবেন তারা যেন অন্তত পাঁচজনকে দেন। নারীদের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রেও বলতে গেলে সকলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সকলের প্রতিনিধিত্ব করা। আসুন, আমরা রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা করি, সকলের প্রতিনিধিত্ব করি। আমরা যে ৪০০ জন প্রতিনিধির কথা বলেছি; তার মধ্যে ১০০ জন নারীর বিষয়টা অনেকদিন থেকে আলোচিত। অতীতে যে ৫০ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তারা প্রতিনিধিত্বশীল নয়। আমি মনে করি নারীদের অবমাননার মধ্যদিয়ে গেছে। এই ১০০ জনের প্রতিনিধিত্ব একই জাতি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করবে- এমন নয়। সকলের অংশগ্রহণের সব জায়গায় তার প্রতিনিধিত্ব থাকবে। আমাদের এই জায়গায় এসে দেখুন কেন বহুত্ববাদের কথা বলেছি। একটা বহুত্ববাদের সমাজ সবাইকে প্রমোট করবে। আইনের মধ্যে করবে, সংসদের মধ্যে ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে করবে- সব জায়গায় সমান প্রতিনিধিত্ব করবে।
প্রশ্ন: প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী দুইবারের বেশি নয় প্রস্তাব করেছেন। একই সঙ্গে তাদের ক্ষমতার ভারসাম্যের দাবি ছিল। সেটি কতোটুকু বাস্তবায়ন হবে?
আলী রীয়াজ: আমাদের বিদ্যমান সংবিধানে প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় না থাকার বিধান রয়েছে, নতুন করে এ বিষয়ে কোনো সুপারিশ করিনি। আমরা সুপারিশ করেছি প্রধানমন্ত্রীর দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় রাখা যাবে না। যেটি দীর্ঘদিন যাবৎ আলোচনা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে ক্ষমতার এককেন্দ্রিক শাসন চলে আসে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি প্রস্তাব করেছি যে, তিনি দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না। এটার কারণ হচ্ছে যাতে করে ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণ না হয়। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতা যেন এক ব্যক্তির হাতে চলে না যায়। সে বিবেচনা থেকে আমরা বলেছি যে, প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদের বেশি থাকা ঠিক নয়। এটা নাগরিকদের মধ্যেও চাওয়া আছে। আমরা সেটিরই প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টা করেছি। এটা অনিবার্য হয়ে উঠেছে; কারণ আমরা ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণ দেখেছি। তাই ক্ষমতার এককেন্দ্রিকরণের বিভাজনটা আমরা করতে চেয়েছি। ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়ে বিগত বছরে বলা হয়েছে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ভাগ করে দেয়া হলেই ভারসাম্য হবে আমরা সেদিকে যাইনি। প্রেসিডেন্টের কিছু ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। কারণ সংবিধানে আছে সকল ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেবেন। প্রেসিডেন্টের সুনির্দিষ্ট দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই তার প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেয়ার দরকার নেই। এর বাইরে ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য আমরা ন্যাশনাল কন্সটিটিউশনের কথা (এনসিসি) বলেছি। এনসিসি বলার দুটো কারণ রয়েছে, এক নম্বর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের সঙ্গে কখনোই বসে না। পার্লামেন্টে যখন বসে একে অপরকে আক্রমণ করে কথা বলেন। এর জন্য আমরা রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করেছি। নির্বাহী বিভাগের দিক থেকে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট আসছেন, আবার আইনসভার দিক থেকে বিরোধীদলীয় নেতা আসছেন। আবার প্রধানমন্ত্রীও আসেন সেখান থেকে। আমরা প্রধান বিচারপতির কথা বলেছি। সংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি এনসিসিতে নিয়ে গিয়েছি। যাতে সবাই পরামর্শ করে সবকিছু করতে পারেন। প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন বিভাগের নিয়োগের বিষয়টিও আমরা এনসিসিতে যুক্ত করেছি। যাতে ন্যাশনাল ইস্যুতে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো।
প্রশ্ন: অন্তর্বর্তী সরকারের সুপারিশ করেছেন। এটি নিয়ে তো বিতর্কও ছিল। আবার কেন অনির্বাচিত সরকারের পরামর্শ করতে হয়েছে। আমরা কি স্থায়ী কোনো ব্যবস্থায় যেতে পারি না?
আলী রীয়াজ: বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গণতন্ত্রের কাঠামোগুলো তৈরি হয়নি। হঠাৎ করে একটি প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। গণতন্ত্র চর্চার বিষয়। যেকোনো প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে অনেক ভুলভ্রান্তির মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে। আমি তো বলি যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ২৫০ বছরের দিকে আগাচ্ছে আমরা প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি ৫০ বছরে। তাতে আমাদের প্রাণ দিতে হয়েছে, লড়াই করতে হয়েছে। কিন্তু দুর্বল জায়গাগুলো হচ্ছে আমরা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারিনি। গণতন্ত্রের চর্চাটা প্রতিষ্ঠান দিয়ে করতে হয়। একটা স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকতে হবে। যে কারণে আমরা বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সেক্রেটারিয়েট দেয়ার কথা বলেছি। আমরা বলেছি, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত করা দরকার। এগুলো যখন আস্তে আস্তে দাঁড়াবে তখন আর এটার প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পৃথিবীতে একটি ইউনিক জিনিস বাংলাদেশ অফার করেছে। অন্যত্র কিন্তু ছিল না। এরপর কোথাও কোথাও এটি অনুসরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা এত সব সমস্যার মধ্যে থেকেও একটা পথ বের করেছেন। অনেকে রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করেন। কিন্তু আমি বলি তারা তো সংকট থেকে উত্তরণের জন্য একটা পথ বের করেছেন। এটার জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ লাগেনি। তাহলে আমরা এখন ওটা থেকে বের হতে পারছি না কেন, কারণ আমরা এখনো প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করতে পারিনি। ধরুন, আগামী দশ বছর যদি এনসিসি (জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ) ঠিকমতো কাজ করে, দুটো ভালো নির্বাচন হয়, বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারি দলের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক হয়, আস্থার জায়গা তৈরি হয়, তখন এটার দরকার হবে না। এটা তারাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। কারণ পথ কেউ বন্ধ করেনি। দশ বছর পর বিরোধী দল, সরকারি দল সবাই যদি দেখেন যে, আমার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এত শক্তিশালী যে তত্ত্বাবধায়কের দরকার নেই, তুলে দেবেন। কিন্তু এ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার যে সংকট গত ৩০ বছর ধরে চলছে সে জায়গা থেকে বের হতে এটা প্রয়োজন। যখন প্রয়োজন হবে না, তখন বাতিল হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: মানবাধিকার কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এটি করতে পারাটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হবে রাষ্ট্রের জন্য...
আলী রীয়াজ: আমরা মনে করি এটি বাস্তবায়ন করা জরুরি। বিশেষ করে মানবাধিকার কমিশনের কথা বলেছি এ কারণে যে, আমরা যদি জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করতে চাই তখন দেখতে হবে এমন প্রতিষ্ঠান আছে কিনা- যারা এ প্রশ্নটা তুলতে পারে। আমাদের দেশে গুম হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যা হয়েছে- মানবাধিকার কমিশন কিচ্ছু করতে পারেনি। আমি আবার তাকে প্রশ্নও করতে পারি না। এখন মানবাধিকার কমিশন যদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হয়, তার যদি জবাবদিহিতা থাকে, সে জবাবদিহিতার ক্ষেত্র যদি সংসদ হয়, আমরা যদি একটি ভালো সংসদ পাই। তাহলে বিরোধী দল সেই প্রশ্নটা সত্যিই করতে পারবে। রাষ্ট্র যদি সত্যি নিপীড়ক হয়ে ওঠে তখন বিরোধী দল মানবাধিকার কমিশনকে প্রশ্ন করতে পারবে। আমরা এটাও বলছি- মানবাধিকার কমিশন যেকোনো জায়গা থেকে তথ্য চাইলে সরকার দিতে বাধ্য থাকবে। তাতে করে আমরা চেয়েছিলাম, তারা দেননি এ বলে পার পাওয়ার সুযোগ হবে না। সংবিধান, প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা করা। নাগরিকের সবচেয়ে বড় অধিকার হচ্ছে বেঁচে থাকার অধিকার। একটা গণতান্ত্রিক সমাজে সে যেন কথা বলতে পারে, সমাবেশ করতে পারে। যখন সেটি লঙ্ঘিত হবে তখন মানবাধিকার কমিশন বলবে এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। মানবাধিকার কমিশনের জুডিশিয়ারি ক্ষমতা নেই। কিন্তু নাগরিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে আদালতে যেতে পারবেন।
প্রশ্ন: অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন, এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো কতোটা শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন?
আলী রীয়াজ: আমি পুরোপুরি আশাবাদী। এই কারণে যে, গত ১৬ বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা, প্রাণঘাতী অভিজ্ঞতা। কী মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে আমরা গেলাম। আমরা কি শিখিনি? নিশ্চয় শিখেছি। রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি সবাই তো শিখেছে। তাহলে এ রকম একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি করার ক্ষেত্রে তারা কেন প্রতিবন্ধক হবেন। তারাও তো চান। আজকে যারা রাজনীতিক আছেন তারা তো বিরোধী দলে ছিলেন ৫ই আগস্ট পর্যন্ত। কী নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্যদিয়ে তারা গেছেন- তারা জানেন না। আমার থেকে তো তারা বেশি জানেন। কারণ তারা সেটির শিকার হয়েছেন। তাই তারাই তো এরকম পরিস্থিতি বন্ধ করার পথ খুঁজবেন। ভবিষ্যতে তাদেরও তো সে জায়গায় যেতে হবে। সবাই তো অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকে না। যারা স্বপ্ন দেখেন তাদের কী হয় তা তো আমরা ৫ই আগস্ট দেখেছি। যারা অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখেন তাদের শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যেতে হয়।
প্রশ্ন: আপনাদের প্রস্তাবনা নিয়ে তো রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্টদের অনেকের আপত্তি আছে। এ বিতর্কের অবসান হবে কীভাবে?
আলী রীয়াজ: আলোচনা তো হবেই। আলোচনা করার জন্যই তো আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। ৫২ বছর আমরা সংবিধান নিয়ে কথা বলতে পারিনি। আজকে যদি আমরা একটু বেশিই বলি, সে বলার তো আমার অধিকার রয়েছে। যতগুলো সংশোধনী হয়েছে কারও সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি। পঞ্চদশ সংশোধনীতে অধিকাংশ মানুষ বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করবেন না। কারও কথায় কর্ণপাত করা হয়নি। এক ব্যক্তির ইচ্ছায় সবকিছু হয়েছে। আজকে সারা দেশ কথা বলতে পারে। আপনি, আমি সবাই কথা বলতে পারছি। আসুন আলাপ আলোচনা করি। আমি যেকোনো সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখি। তার মানে এটার একটা গুরুত্ব বিবেচিত হচ্ছে। আমার প্রস্তাব হিসেবে নয়, বিষয় হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ বলে সকলে যুক্ত হচ্ছে। তাহলে আসুন সকলে কথা বলি।
প্রশ্ন: ছাত্ররা ১৯৭২-এর সংবিধানকে মুজিববাদী সংবিধান বলছে, যেটি শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার করে তুলেছে। আপনারা কী মনে করেন?
আলী রীয়াজ: আজকের বিদ্যমান সংবিধান ৭২-এর সংবিধান নয়। ৭২-এর সংবিধানের প্রথম পুনর্লিখন হয়েছে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিব যখন চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে একদলীয় ব্যবস্থা প্রেসিডেন্সিয়াল রুল চালু করেছেন। ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রথম লঙ্ঘিত হয়েছে আওয়ামী লীগ দ্বারা। যারা ’৭২-এর সংবিধানের মর্যাদা নিয়ে কথা বলেন তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ ’৭৫-এর চতুর্থ সংশোধনী কি ’৭২-এর সংবিধানের লঙ্ঘন নয়। আবার পঞ্চদশ সংশোধনীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আপনি সমস্ত ব্যবস্থা বদলে দিচ্ছেন। জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই। নির্বাচনের আগে কোনো ম্যান্ডেট নেই, সংবিধান সংশোধনীর জন্য কোনো গণভোট হচ্ছে না। ছাত্ররা রাজনৈতিক শক্তি। তাদের কথা বলার অধিকার রয়েছে। এটা বাস্তবতা যে, বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান এক ব্যক্তির শাসন তৈরির পথ তৈরি করেছে। অন্যথায় বাংলাদেশ এই পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যেতো না। সংবিধানকে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে যেটা ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৬ বছর বাংলাদেশের মানুষ তা হাড়ে হাড়ে, শিরায় শিরায় অনুভব করেছে।
প্রশ্ন: সংবিধান সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি- এ নিয়েও তো বিতর্ক রয়েছে।
আলী রীয়াজ: এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক আমাদের কমিশনে কাঠামোগতভাবে সকলের প্রতিনিধিত্ব আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনি। এটা আমাদের দুর্বলতা। এতে ধর্মীয়ভাবে যারা সংখ্যালঘু, জাতি গোষ্ঠীর বিবেচনায় যারা তাদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। এই কমিশনের এ দুর্বলতা থেকে গেছে। এটা আমি প্রথম দিন থেকেই স্বীকার করি। কিন্তু অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে করতে হয়েছে। তাতে ওই দুর্বলতা শেষ হয়ে যায় না। তারপর আমরা কী করেছি। আমরা যখন জানি এটা আমাদের দুর্বলতা, আমরা চেষ্টা করেছি সে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সমস্ত রকম মানুষকে যুক্ত করার। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। যারা ভিন্ন ভিন্ন জাতি গোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করেন তাদেরকে আমরা ডেকেছি, তাদের কথা শুনেছি। ধর্মীয় বিবেচনায় যারা সংখ্যালঘু বিবেচিত হন তাদেরকেও ডেকেছি। তাদের কথা তো শুনতে হবে। তারা তো এ দেশের নাগরিক। সংবিধান তো তাদের জন্যও।
প্রশ্ন: জাতীয় ঐকমত্য গঠনের প্রক্রিয়া কবে থেকে শুরু হবে?
আলী রীয়াজ: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রধানরা নিয়মিত আমরা বসছি। কিছু ভিন্নমত থাকলে সেটার সমন্বয় করছি। যাতে আমাদের সুপারিশগুলোতে সামঞ্জস্য থাকে। এটার কাজ প্রায় শেষ হয়ে আসছে। আশা করছি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে শেষ করতে পারবো। অন্তত চার পাঁচটি কমিশনের পুর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে পারবো। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। তার আগে রাজনৈতিক দলগুলো পুরো প্রতিবেদন পেয়ে যাবে। সে আলোকে তারা তাদের মত দিতে পারবে।
News Courtesy:
Janatar Chok | February 1, 2025