ক্ষমতার ভারসাম্য, বিকেন্দ্রীকরণ এবং আর যা থাকছে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে

ক্ষমতার ভারসাম্য, বিকেন্দ্রীকরণ এবং আর যা থাকছে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে

জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার সঙ্গে মিল রেখে এক গুচ্ছ সুপারিশ করতে যাচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশন, যার মূল লক্ষ্য রাষ্ট্র ও সরকারে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিকেন্দ্রীকরণ।

এক ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, সাংবিধানিক সংস্থা বাড়ানো ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাড়ানোসহ সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ থাকছে কমিশনের প্রতিবদনে।

অংশীজনের মতামত নিয়ে এবং জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আগামী বুধবার এ প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের এই শিক্ষক সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এককেন্দ্রীকরণ থেকে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরির প্রস্তাব থাকছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা থাকবে সুপারিশে। মূল কথা হচ্ছে আমরা এককেন্দ্রিকতা থেকে বেরোতে চাই জবাবদিহিমূলক একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে।”

প্রতিবেদনটি চার-পাঁচ খণ্ডের হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “মূল প্রতিবেদনে থাকবে সুপারিশ, পর্যালোচনা, যৌক্তিকতা; কেন, কী করলাম। এর সঙ্গে সাপোর্টিং ডকুমেন্টস।”

প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে পরে দল ও অংশীজনের সঙ্গেও বসার কথা রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “সুপারিশ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সেটা অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দলের আলোচনার মধ্য দিয়ে সমন্বয় করা হবে। এটা আমাদের কাজ নয়। আমরা সকলের সাথে কথা বলেছি, সুপারিশ দিচ্ছি। নাগরিক, অংশীজন, রাজনৈতিক দল বলছেন, আমাদের মতামত হচ্ছে এগুলো করতে হবে। এখন কীভাবে করবেন রাজনীতিবিদ এবং অন্তর্বর্তী সরকার সেই পথ খুঁজে বের করবেন।”

কোথায় কোথায় সংকট

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলছেন, ওয়েবসাইট, ইমেইলে সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের মাধ্যমে জরিপ করা হয়েছে, যেখানে ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ মতামত দিয়েছেন। এর বাইরে অংশীজনদের সাথে বৈঠক হয়েছে, লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে; রাজনৈতিক দলগুলোও লিখিত বক্তব্য দিয়েছে।

আলী রীয়াজ বলেন, “এগুলোর মধ্য থেকে আমরা চেষ্টা করেছি ঐকমত্যের জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে। শাসন কাঠামোয় যে সংকটগুলো দেখতে পেয়েছি গত ১৬ বছরে; অংশত ৫২ বছরে দেশের সংবিধানে যে সংকটগুলো দেখতে পেয়েছি, তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।”

দেশের সংবিধানে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কতগুলো জায়গা তারা শনাক্ত করেছেন।

“প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং সংবিধানের সমস্ত বিধিবিধানে এককেন্দ্রীকরণ ঘটেছে। এতে করে জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি তৈরি হয়েছে। যে কারণে মানুষ চাচ্ছে ক্ষমতার একটার ভারসাম্য তৈরি হোক। প্রধানমন্ত্রীর হাতে যে অভাবনীয় অসীম ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে, সেটা যেন না থাকে। আমরা সেজন্য ক্ষমতার ভারসাম্য, সেটা কেবল ব্যক্তির মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা নয়, অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য হিসেবে বিবেচনা করছি না- এটা একটা দিক। আরেকটা দিক হচ্ছে- প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা করা।”

সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের বলা হয়েছে- এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করবেন: তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শদান করেছেন কি না এবং করে থাকলে কি পরামর্শ দিয়েছে, কোন আদালত সেই সম্পর্কে কোন প্রশ্নের তদন্ত করতে পারবেন না।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “যেহেতু রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কিছু করতে পারেন না, সেহেতু আমরা ওই জায়গাটায় নজর দিয়েছি, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কী করে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করা যায়। সেক্ষেত্রে আমরা কিছু প্রতিষ্ঠানের কথা বিবেচনা করেছি যেখানে শুধু প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন বা রাষ্ট্রপতি উপস্থিত থাকবেন, তা নয়। বিরোধী দলে যারা থাকবেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দলে যারা থাকবেন, তাদের কীভাবে সংশ্লিষ্ট করা যায় (তা বিবেচনায় রাখা হয়েছে)।”

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকবে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা।

বিশেষ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও একক কর্তৃত্ব সীমিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছে কমিশন।

“ধরুন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র আধিপত্যই প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর করে দেয়। আমাদের ব্যবস্থা করতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন যথাযথভাবে চলতে পারে... এটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় ছিল আমাদের। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ জায়গাটা তৈরি করতে হবে। এখানে ক্ষমতাটা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মধ্যে ভাগ হয়ে যায়,” বলেন কমিশন প্রধান।

দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়

আলী রীয়াজের ভাষ্য, এখনকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদে (দলের প্রধান, সরকার প্রধান, সংসদের প্রধান) থাকায় তিনি তার ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করতে পারেন।

তিনি বলেন, “আমরা মনে করছি, এগুলোর মধ্যে এক ধরনের সেপারেশন তৈরি করে দিতে হবে। যেন একই ব্যক্তির হাতে এতগুলো জায়গা না থাকে। প্রধানমন্ত্রী উপর্যুপরি ক্ষমতায় থাকলে সংকটটা বাড়ে। কারণ, দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকলে প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, যেটা শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দেখতে পেয়েছি, ভয়াবহভাবে দেখতে পেয়েছি। ওই জায়গাগুলোতেও নজর দিয়েছি।

“সামগ্রিকভাবে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে প্রত্যাশা, অংশীজনদের বক্তব্য হচ্ছে- দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রীর পদে একই ব্যক্তি যেন না থাকেন। আমরা এটা একটা ঐকমত্যই দেখতে পেয়েছি যে, কেউ চাচ্ছেন না দুবারের বেশি একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী থাকুন। কারণ, তারা মনে করেন, এতে দলগুলোর মধ্যেও গণতন্ত্র চর্চার পথ তৈরি হবে। দু্ই মেয়াদের পরে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য একজন নতুন নেতা তৈরিরও চেষ্টা থাকবে।”

৭০ অনুচ্ছেদের ‘দুর্বলতা’

রাজনৈতিক দল থেকে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারণে আসন শূন্য হওয়ার বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৭০ এ বলা হয়েছে- কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি- (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তা হলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হবার অযোগ্য হবেন না।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এখন একজন এমপি নির্বাচিত হন একটি আসনে। তার নির্বাচনি এলাকার মানুষ ভোট দেয়। দল তাকে মনোনয়ন দেয়, প্রতীক দেয়। কিন্তু এলাকার মানুষের কথা বলার পথ বন্ধ হয়ে যায়।

“সেটা যেন না থাকে সে ব্যবস্থা করছি। আর্টিকেল ৭০ এর বড় দিক হচ্ছে- বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের কোনো ব্যবস্থা নেই।”

ব্রিটেনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতায় থেকেছে, তার নেতা চেইঞ্জ হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী চেইঞ্জ হয়েছে। পার্টি তো ক্ষমতা থেকে যায়নি যতক্ষণ না নির্বাচন হয়েছে। এখনও লেবার পার্টির যিনি প্রধান, তার সম্পর্কে প্রশ্ন উঠছে, উনি নাকি নেতৃত্বে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। কেউ কিন্তু বলছে না, লেবার পার্টি ক্ষমতায় থাকার যোগ্যতা হারিয়েছে। এটা বাংলাদেশে নেই। এ ব্যবস্থার বড় প্রতিবন্ধক হচ্ছে আর্টিকেল সেভেন্টি।”

জবাবদিহিতা নিশ্চিতেও সুপারিশ থাকছে প্রতিবেদনে।

কমিশন প্রধান বলেন, “আমরা ওই জায়গাটায় বিশেষভাবে লক্ষ্য করছি- প্রধানমন্ত্রীর সংসদের কাছে জবাবদিহিতার প্রশ্ন থাকে। আমরা অন্যান্য স্ট্যান্ডিং কমিটির দিকেও নজর দিয়েছি। যেসব স্ট্যান্ডিং কমিটি রয়েছে সেগুলোতে তো জবাবদিহিতার জায়গা হওয়ার কথা, সেটা হয়নি। বিরোধী দল কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। আমরা মনে করি, ৭০ অনুচ্ছেদকে দেখতে হবে এটা জবাবদিহিতার জায়গা তৈরির করার পথ। আমরা সেই পথটা তৈরি করার চেষ্টা করেছি আমাদের সুপারিশে।”

স্থানীয় সরকার কমিশন, দুদক, মানবাধিকার কমিশনকেও সাংবিধানিক সংস্থা করতে হবে

কোথায় কী ধরনের সংশোধন প্রস্তাব থাকছে তা প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার আগে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে চাননি সংস্কার কমিশনের প্রধান।

“প্রত্যেকটা বিভাগ– যেমন বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা, এর বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তাব থাকছে। সাংবিধানিক কমিশনগুলোর ব্যাপারেও আমাদের প্রস্তাব, সুপারিশ থাকবে।”

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন কমিশনের ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান’ হওয়া উচিত বলে মনে করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, “এ সাংবিধনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছ হয় এবং একক ব্যক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী যাতে না হয় সে ব্যবস্থাটা করা দরকার; সুপারিশ করছি আমরা। আমরা অন্ততপক্ষে পাঁচটি কমিশনকে সাংবিধানিক কমিশন করার কথা বলছি। এখন তো দুটো আছে (নির্বাচন কমিশন ও সরকারি কর্ম কমিশন)। এর বাইরে দুটো কমিশনকে (ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন ও দুদক) এবং নতুন একটি (স্থানীয় সরকার কমিশন) করার প্রস্তাব করছি।”

স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত নতুন সাংবিধানিক কমিশন করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা দরকার। যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে, সেক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা যেভাবে ভূমিকা পালন করেন; সেটা স্থানীয় সরকারের জন্য, জনপ্রতিনিধিদের জন্য মোটেই ইতিবাচক নয়।”

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য যেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তৈরি হয় সে বিষয়টিও সুপারিশে রাখা হয়েছে।

বিচার বিভাগের বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়টা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা না গেলে নির্বাহী বিভাগের ওপর নজরদারি করা দুরূহ শুধু নয়, অসম্ভব। একটা গণতান্ত্রিক সমাজের বড় লক্ষণ হচ্ছে- তার বিচার বিভাগ স্বাধীন কি না। গত ১৬ বছরে অত্যন্ত নগ্নভাবে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করতে দেখেছি। এটা বন্ধ করার পথ-পদ্ধতি যেন তৈরি করা যায় সেটা আমরা চেষ্টা করেছি।”

‘দরকার রাজনৈতিক মতৈক্য’

বিদ্যমান সংবিধান বাদ দিয়ে নতুন করে সংবিধান প্রণয়ন, পুনর্লিখনের দাবিও এসেছে। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে আগের ‘সংবিধান বাতিল হয়ে গেছে’ বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ কারণে তারা নতুন করে সংবিধান প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে, যার মাধ্যমে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

এসবই রাজনৈতিক মতৈক্যের বিষয় বলে মনে করে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমাদের টার্মস অব রেফারেন্স আছে। আমাদেরকে বলা হয়েছে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দিতে। আমরা সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দেব। ওই সুপারিশগুলোতে যদি সকলে একমত হন, সেগুলো তারা কীভাবে সংবিধানে যুক্ত করবেন, সেটা একটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া।

“নাগরিক কমিটির একটি অংশ, রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য আছে- তারা নিজেরা বসে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলে কোথায় একমত হবেন আমরা জানি না। প্রক্রিয়াটা তাদের বিষয়।”

অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচন পর্যন্ত, পর্যবেক্ষণ গবেষকের

সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশ গুছিয়ে আনলেও সেসব বাস্তবায়নে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন সংসদ বিষয়ক গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ।

তার মতে, “পরবর্তী সংসদ যতক্ষণ পর্যন্ত না একে (সংস্কার প্রতিবেদন) অনুমোদন করছে, আগানোর কোনো রাস্তা নেই; সংবিধানই সেই সুযোগ দেয়নি।”

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ব্যক্তিগত মত এটা। বিভিন্ন গোষ্ঠী, মত ও দলের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঐক্যমতে আসার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যদি না করেন এর লেজিটিমেসি নিয়ে সারাজীবন প্রশ্ন উঠবে। অন্য কোনো রাস্তা খোলা নেই।

“অধ্যাদেশের মাধ্যমে কোনোক্রমেই সম্ভব না। স্পষ্টই বলাই আছে- অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে কোনোক্রমেই সংবিধান পরিবর্তন করা যাবে না।”

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের ভাষ্য, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রশ্নের আগে তা সংস্কার করা হবে, না কি নতুন করে তৈরি করা হবে সেটা জানা জরুরি।

তিনি বলেন, “নতুন সংবিধান তৈরি করলে সাংবিধানিক পরিষদ ও গণভোট করতে হবে। সংস্কার করলে সংসদ লাগবে, সংসদের মাধ্যমে চূড়ান্ত হতে হবে। না হলে গণভোট করতে হবে। তবে আপাতত অধ্যাদেশ দিয়ে কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে, যেগুলো পরবর্তীতে সংসদে পাস করাতে হবে।”

এই শিক্ষক মনে করেন, এসব নিয়ে যে রাজনৈতিক বোঝাপড়ার বিষয় আছে, তা সরকার এবং অন্যদের মধ্যে এখনও হয়ে উঠেনি। ফলে বাস্তবায়নের প্রশ্ন অনেক পরে, গ্রহণের প্রশ্নই রয়ে গেছে।

মাহবুবুর রহমান বলছেন, দলগুলো কী চাইছে তা জানতে সরকারকে বারবার আলোচনায় বসতে হবে। তবে আলোচনার পথ এখনও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।

“বিএনপি ও অন্যান্য বড় দলগুলোসহ রাজনীতির প্রধান স্টেকহোল্ডারদের আস্থায় আনতে হবে। নির্বাচনি ব্যবস্থার নানা সীমাবদ্ধতা এখনও রয়ে গেছে; স্বাধীন কমিশনগুলোর (দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন) ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দরকার; প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য; সরকারের জবাবদিহিতা; পাঁচ বছর পরে যেন নির্বাচনের জন্য লড়াই করতে না হয়; রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র- এ বিষয়গুলোতে পরিবর্তন আনতে রাজনৈতিক ঐক্যমত প্রয়োজন।”

News Courtesy:

Bangla Bd News 24 | Janaury 14, 2025

 

An unhandled error has occurred. Reload 🗙