বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আন্দোলন বাংলাদেশে এক নতুন রাজনীতির জন্মের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আন্দোলনে সহিংসতা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা এখনও নিশ্চিত হওয়ায় যায়নি। সরকার এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৫০ বলে জানিয়েছে৷ তবে বাংলাদেশের গণমাধ্যম এ সংখ্যা অন্তত ২১০ বলে জানিয়েছে। এদের বেশিরভাগই তরুণ, কেউ কেউ শিশু। আহত হয়েছেন আরো কয়েক হাজার।
আন্দোলন ছড়িয়ে যাওয়ার পর দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়, পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী এবং বিজিবি। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে।
কিছু বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে কারফিউ শিথিল করা হলেও এখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরকারের প্রতি অনাস্থা বাড়ছে?
আন্দোলন এভাবে গড়ে উঠবে এবং দ্রুত ছড়িয়ে যাবে, এমনটা আন্দাজ করতে পারেননি বিএনপির অনেক নেতাও। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই আন্দোলন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনগণের অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, "আমি মনে করি, সরকারকে এখন অনেক হিসাব-নিকাশ করে কাজ করতে হবে। পাঁচ বছরের জন্য যে-কোনো কিছু করার লাইসেন্স পাওয়া গেছে, এমন মানসিকতা থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে।"
২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে আরো তিনটা নির্বাচনেও জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে এই তিনটি নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ।
আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ নানা আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেউ কেউ আগের সব আন্দোলনের চেয়ে ভিন্নভাবে দেখতে চাইছেন।
কোটাসংস্কার আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ
কোটা সংস্কার নিয়ে দ্বিতীয় দফা টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১ জুলাই৷ আন্দোলন সংঘর্ষে রূপ নেয় ১৫ জুলাই৷ প্রথম আলোর বরাত দিয়ে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ২০২ জন হওয়ার কথা জানিয়েছে এপি৷ ছবিঘরে থাকছে ঘটনা পরিক্রমা৷
৯ জুলাই, মঙ্গলবার
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থীর আবেদন৷ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা চার ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন৷ আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে পরদিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়৷
১২ জুলাই, শুক্রবার
কোটা সংস্কারের দাবিতে শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন৷ রেলপথ অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷
১৩ জুলাই, শনিবার
সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা৷ পরের দিন রোববার গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর এ স্মারকলিপি দেবেন আন্দোলনকারীরা৷ তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে সরকারের এখন কিছু করার নেই৷
১৪ জুলাই, রোববার
গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?’ এ মন্তব্যের মাধ্যমে তাদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়৷
১৪ জুলাই, রোববার
একই দিনে পদযাত্রা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনকারীরা জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডের কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন৷
১৫ জুলাই, সোমবার
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলন থেকে আত্মস্বীকৃত রাজাকার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতা বা আচরণের প্রকাশ ঘটেছে৷ এর জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত৷ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে৷ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে৷
১৬ জুলাই, মঙ্গলবার
সারা দেশে দিনভর ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়৷ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকার সমর্থকেরা৷ এতে নিহত হন ছয়জন৷ রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের বুলেটে নিহত হন৷
১৭ জুলাই, বুধবার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন অব্যাহত৷
১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার
দেশব্যাপী প্রতিরোধ, সহিংসতা, সংঘর্ষ ও গুলি৷ মোট নিহত ২৭ জন৷ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশ ছিল প্রায় অচল৷
১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার
রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে৷ এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত দেড় হাজার৷ সারা দেশে বিজিবি মোতায়েন৷
১৯ জুলাই, শুক্রবার
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে৷ রাজধানী ঢাকা ছিল কার্যত অচল, পরিস্থিতি ছিল থমথমে৷
১৯ জুলাই, শুক্রবার
দেশের বিভিন্ন জেলাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়৷ রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি, সেনাবাহিনী মোতায়েন৷ টেলিয়োগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা সম্পূর্ণ বন্ধ৷ একদিনেই নিহত ৮৪৷
২০ জুলাই, শনিবার
দেশজুড়ে কারফিউ ও সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি সাধারণ ছুটি ঘোষণা৷ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ধাওয়া ও গুলি৷ উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা ও মিরপুর৷ এ ছাড়া মোহাম্মদপুরেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ শনিবার নিহত ২৬ জন৷এদিন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে৷
২১ জুলাই, রোববার
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সামগ্রিকভাবে বাতিল করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়, কোটাপ্রথা হিসেবে মেধাভিত্তিক ৯৩%; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ %; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ % এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ % নির্ধারণ করা হলো৷ রোববার নিহত ১৯ জন৷ সমন্বয়ক নাহিদকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি৷
২২ জুলাই, সোমবার
কোটাপ্রথা সংস্কার করে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তৈরি করা প্রজ্ঞাপন অনুমোদন প্রধানমন্ত্রীর৷ সব মিলিয়ে ছয় দিনে মোট ১৮৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়৷
২৩ জুলাই, মঙ্গলবার
কোটাপ্রথা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি৷ মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে ১৯৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ মৃত্যুর এই হিসাব কিছু হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে পাওয়া বলে জানিয়েছে দৈনিক প্রথম আলো৷ সব হাসপাতালের চিত্র পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছে তারা৷
২৩ জুলাই, হাসপাতালের তথ্য
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু-কিশোর এবং নারীও রয়েছেন৷৷ আহতদের অনেকে চোখে রাবার বুলেট ও ছররা গুলি এবং শরীরের অন্যান্য জায়গায় গুলির ক্ষতচিহ্ন নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষে তিনজন পুলিশ সদস্য এবং একজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন৷ ১ হাজার ১১৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন৷ এর মধ্যে গুরুতর আহত ১৩২ জন৷ তিনজন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন৷
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির বর্ণনা
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভির সদর দপ্তরে হামলা চালানো হয়েছে৷ এছাড়া ঢাকার ফ্লাইওভারে দু’টি টোল প্লাজা, এক্সপ্রেসওয়েতে এবং দুইটি মেট্রোরেল স্টেশনে আগুন দেয়া হয়েছে৷ কয়েকশ’ সরকারি ভবনে আগুন দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন আইনমন্ত্রী৷
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এপিকে জানিয়েছেন, ছয় দিন বন্ধ থাকার পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় আংশিকভাবে চালু করা হয়েছে৷ তার অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা প্রধান তথ্য কেন্দ্রে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ফলে ফাইবার অপটিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷
গ্রেপ্তার
সারা দেশ থেকে এখন পর্যন্ত আড়াই হাজারেও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি৷ সারাদেশে অন্তত ২৭ হাজার সেনা মোতায়েন আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ ২৪ জুলাই কারফিউ শিথিল করা হলেও এখনো তা বহাল আছে৷
এবারের আন্দোলন দমনের জন্য কেবল রাজধানী ঢাকাতেই দুই শতাধিক মামলায় দুই লাখের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়েছে। দেশজুড়ে কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১২ দিনে অন্তত ২৫৩ জন ছাত্রকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছেডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার দৈনিক প্রথম আলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দলের অন্য নেতাদের মতে, কোটা আন্দোলনকে 'ছিনতাই' করেছে বিএনপি-জামায়াত। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করা দলটির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিভিন্ন মামলার রায়ে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ থাকলেও এখনও দল হিসাবে জামায়াতের বিচারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দাবি করেছেন, আন্দোলনে ‘অশুভ শক্তি' এবং "মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি" জড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, "ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।"
নাছিম অবশ্য আওয়ামী লীগের নানা ঘাটতির কথাও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, "আমাদের দলের নেতৃত্বে কিছু গ্যাপ ছিল, সমন্বয়ের অভাব ছিল, সেটা তো অস্বীকার করার কিছু নেই। সামনে আমাদের এ নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে।" দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।
‘সরকার সব সীমা অতিক্রম করেছে'
সরকারের পক্ষ থেকে সব স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হলেও সেটা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ককে ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে। তাদের কাউক বাসা থেকে, কাউকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। রোববার (২৮ জুলাই) ডিবি অফিস থেকে জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ানোর অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
কিন্তু সে রাতেই আরো কয়েকজন সমন্বয়ক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছাড়াই আন্দোলন গড়ে তোলা ও চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশে 'অভূতপূর্ব' বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব গড়ে উঠছে বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, "টানা ১৬ বছর ধরে একই দল ক্ষমতায় থাকায় ধীরে ধীরে একটি ব্যাক্তিকেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যে-কোনো সমস্যার সমাধানের জন্য সবাই এখন প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে।"
এই আন্দোলন এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে বলে মনে করেন ড. সিদ্দিকী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি একে অপরের রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করার বদলে একে অপরকে ধ্বংসের রাজনীতি করে এসেছে। তিনি বলেন, "তরুণ প্রজন্ম এই ধরনের রাজনীতি আর পছন্দ করছে না। এটা যদি এই দুই দল বোঝার চেষ্টা না করে, তাহলে তাদের আর নেতৃত্ব না-ও থাকতে পারে।"
এমনকি এই আন্দোলনের মাধ্যমে এই দুই দলের বাইরে তৃতীয় কোনো শক্তিশালী দলের আবির্ভাব হতে পারে বলেও ধারণা তার।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ মনে করেন, সরকারের ওপর এই আন্দোলনের প্রভাব এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের যে বাতাবরণ সরকার তৈরি করার চেষ্টা করে আসছিল, এই আন্দোলন সেটার অবসান ঘটিয়েছে। অতীতেও এই সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান ছিল না, ফলে এখন বলপ্রয়োগ ছাড়া তার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।"
এবারের ‘‘দমনপীড়নের মাধ্যমে': সরকার "সব ধরনের সীমা অতিক্রম করেছে" বলে মন্তব্য করেছেন আলী রীয়াজ। তিনি মনে করেন, "মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে যা বুঝতে পারছি, এই আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের সব বৈধতার অবসান ঘটেছে।"
বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আন্দোলন দমনে সরকার আপাতত সফল বলে মনে হলেও এই আন্দোলন চলতে থাকবে বলেও মনে করেন তিনি।