দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নির্বাচনী গণতন্ত্রের দুর্দিন
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রায় ২০টি দেশ রয়েছে। এসব দেশ এখন বিশ্ব পুঁজিতন্ত্রের এক বড় কেন্দ্র। তাদের বিপুল জনসংখ্যা। পুঁজিতন্ত্রের বিকাশে এসব দেশের প্রায় ২৭০ কোটি মানুষ প্রতিদিন বিপুল মূল্য সংযোজন করে যাচ্ছে। বিনিময়ে পাচ্ছে কেবল ‘ক্রনি ক্যাপিটালিজম’ বা স্বজনতোষী পুঁজিবাদ।
রাজনৈতিক ও নাগরিক স্বাধীনতায়ও পুরো অঞ্চলের মানুষের দুর্ভাগ্য চলছে বলা যায়। এই অঞ্চলের অল্প কয়েকটি দেশে কেবল বহুদলীয় নির্বাচনী ব্যবস্থা আছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দিকে তাকালে সবচেয়ে হতাশ হতে হয়। দু-তিন দশক আগেও এই অঞ্চলে নির্বাচনী গণতন্ত্রের যে পরিবেশ ছিল, তাতে বিপজ্জনকভাবে টান পড়েছে। ভয়ডরহীন নির্বাচনী পরিবেশ ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ঘনিয়ে এলেই এসব দেশের পরিবেশ অস্থির হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতি উদ্বিগ্ন করে তুলছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও। সে রকমই একটি সময় ২০২৩-২৪। এ অঞ্চলের কয়েকটি দেশে জাতীয় নির্বাচনের মৌসুম সামনে। সার্ক ও আসিয়ান অঞ্চলে নির্বাচন এলেই কেন এত অশান্তি আর অনিশ্চয়তা? এর পরিণতি বা প্রতিকার কোন পথে? প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে বছর শেষে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় শুভ নজির হয়ে উঠতে পারে?
কিছু খণ্ডচিত্র
দক্ষিণ এশিয়ার সব কয়টি দেশে নির্বাচনী ঐতিহ্য ছিল, এমনকি আফগানিস্তানেও—সেটা এখন বিশ্বাস করা কঠিন। ন্যাটো ও রুশ আগ্রাসনের সময় আফগানিস্তানে নির্বাচনের আয়োজন হলেও তা উন্মুক্ত, স্বাধীন ও বহুদলীয় চরিত্রের ছিল না। তার আগে ১৯৪৯ সালে রাজতন্ত্রের হাত ধরে বহু আশাবাদ নিয়ে দেশটিতে সংসদীয় নির্বাচনী সংস্কৃতির জন্ম হয়েছিল। কালে কালে সেটা এগোনোর বদলে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
২০২১ সালে তালেবানরা কাবুল দখলের পর নির্বাচন কমিশনই তুলে দিয়েছে। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও সেখানে আর নেই। তালেবানদের ‘ইসলামি আমিরাত’ সরকার বলছে, ‘নির্বাচন আয়োজনের জন্য আফগানিস্তান তৈরি হয়নি।’ ২০২২ সালের ১৭ মে তালেবান নেতা সিরাজউদ্দীন হাক্কানি সিএনএনের সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান আমানপুরকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘নির্বাচন’ আফগানিস্তানের জন্য একটা অসময়োচিত প্রসঙ্গ।
আফগানদের নির্বাচনী ইতিহাস পড়ে বাংলাদেশে অনেকের ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক এবং ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনের ঘটনাবলি মনে পড়তে পারে। এসব নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও স্বাধীনতার চেতনার স্ফুরণ ঘটিয়েছিল। ঔপনিবেশিক শাসকদের অধীনে ওই সব নির্বাচন হয়েছিল। তবে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ছিল বিতর্কমুক্ত। উৎসবমুখর মেজাজে মানুষ ভোটের ফল গ্রহণ করেছিল। জাতীয় নির্বাচনের দিন-তারিখ সে সময় দুশ্চিন্তা বয়ে আনত না।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের বাকি অংশে নির্বাচনী ব্যবস্থা ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে। জেনারেল জিয়া–উল–হকের বিদায়ের পর আবার নিয়মিত কার্যকর নির্বাচনী ব্যবস্থা ফিরে আসে। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে সেখানে নির্বাচন নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে।
ইমরান খান ও তাঁর দলের স্পষ্ট বিজয়ের আভাস দেখে ‘ভুট্টো’ ও ‘শরিফ’ বংশের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীও নির্বাচন দিতে চাইছে না। পাশাপাশি ইমরান খানের দল ভাঙারও চেষ্টা চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে মামলা হচ্ছে। সরকারের এমন ভূমিকাকে নির্বাচনের আগেই জনগণের স্বাধীন মতামত ছিনতাইয়ের সঙ্গে তুলনা করা যায়। অক্টোবরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেখানে আদৌ জাতীয় নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে গভীর সন্দেহ আছে। অনেকে সেখানে ইমরানের কারাজীবন বা দেশান্তরের শঙ্কার কথা বলছেন।
এই অঞ্চলের বড় দেশ ভারতে জাতীয় নির্বাচন হওয়া না-হওয়া নিয়ে কোনো সংশয় নেই। আগামী বছর সেটা হওয়ার কথা। তবে নির্বাচনের আগে-পরে সেখানে মতপ্রকাশের পরিসর যে সংকুচিত হচ্ছে, আন্তর্জাতিক নানা সূচক তার সাক্ষ্য দেয়। ২০২৩ সালের প্রেস ফ্রিডম সূচকে ভারত ১৮০ দেশের মধ্যে ১৬১তম হয়েছে। মাত্র এক বছর আগে এটা ছিল ১৫০। ১০ বছর আগে ছিল ১৪০। ২০০২ সালে
ছিল ৮০।
রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার (আরএসএফ) নামের সংস্থা এই সূচক তৈরি করে। সূচকের এই পতনশীল চেহারা ভারতীয় গণতন্ত্রের ভেতরের ছবি অনেকখানি জানিয়ে দিচ্ছে। সেখানে গত মার্চে বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধীর লোকসভার সদস্যপদও কেড়ে নেওয়া হয়। কাজটা আইনি প্রক্রিয়ায় হলেও বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী মত কোণঠাসা করতে এই পদক্ষেপ।
এমপি কেনাবেচা ও সংখ্যালঘুর শাসন
২০১৪ থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতে বিরোধী দলের অন্তত ২১১ এমপি বা এমএলএ বিজেপি ‘কিনে ফেলেছে’। নির্বাচন হলেও বিরোধী মতগুলো দ্রুত ‘সরকারি মতে’ পরিণত করে ফেলা হচ্ছে (দ্য প্রিন্ট, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২)। রাজস্থানের কংগ্রেস নেতা অশোক গেহলট ভারতের নির্বাচনী গণতন্ত্রের এ দৃশ্যকে ‘পশু কেনাবেচা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এই ‘কেনাবেচা’ দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচনী গণতন্ত্রকে এক অদ্ভুত চেহারা দিয়েছে। শ্রীলঙ্কায় এমন একজন দেশ চালাচ্ছেন, ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে যাঁর দলের সদস্য মাত্র একজন। অথচ ২০২০ সালের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে প্রধান চারটি দলের আসন ছিল যথাক্রমে ১৪৫, ৫৪, ১০ ও ৩। যে দল মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে এবং আসন পেয়েছে মাত্র একটি, সেই ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের সমর্থনে এবং গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত রাজাপক্ষে বংশের অদৃশ্য সমর্থনে রাষ্ট্র চালাচ্ছে।
গণতন্ত্র সংখ্যালঘুর কথা শুনে সংখ্যাগুরুর মাধ্যমে দেশ পরিচালনার কথা বলে। শ্রীলঙ্কায় সেই ধারণা তিরোহিত। যে দুটি দল যথাক্রমে ৫৯ শতাংশ ও ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তারা সরাসরি শাসনক্ষমতায় নেই। অর্থাৎ সেখানে ভোটের বাস্তব কোনো কার্যকারিতা নেই। সংগত কারণেই কি না, প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে সে দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন স্থগিত করে দিলেন।
আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়েও কদর্য এক কাণ্ড শুরু হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়েগায়া অভিযোগ তুলেছে, বর্তমান প্রেসিডেন্টের পেছনে জনগণের তেমন সমর্থন নেই। তাই নতুন নির্বাচনে যাওয়ার আগে একটা বড়সড় দল বানাতে তিনি বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের কেনাকাটার পরিকল্পনা করছেন। সে দেশে জনমত জরিপে বিরোধী দল ‘জনতা বিমুক্তি পেরামুনা’ সবচেয়ে এগিয়ে আছে। তাই অনেকে আশঙ্কা করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কয়েকটি দেশের মতো সেখানে হয়তো নির্বাচন নিয়ে শাসক গোষ্ঠী কোনো দুষ্টবুদ্ধির খোঁজে থাকবে।
জনমতকে অবমূল্যায়নের আরেক নজির নেপালের চলতি সরকার। গত নভেম্বরে সেখানে সংসদ নির্বাচন হয়, যাতে সবচেয়ে বেশি আসন পায় নেপালি কংগ্রেস। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ইউএমএল নামের দল। এই দুই দল ভোট পায় যথাক্রমে ২৬ ও ২৭ শতাংশ; আসন পায় যথাক্রমে ৮৯ ও ৭৮। অথচ ২৭৫ আসনের মধ্যে মাত্র ৩২ আসন ও ১১ শতাংশ ভোট পাওয়া মাওবাদী নেতা পুষ্প কমল দহল এখন প্রধানমন্ত্রী।
নেপালের রাজনীতিবিদের একাংশ কিছু ‘বন্ধু দেশে’র প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে জনতার রায়কে অবজ্ঞা করে সংখ্যালঘুদের সরকার প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হচ্ছে। এতে নির্বাচনী গণতন্ত্র নিয়ে দেশের নাগরিকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতাও লেগেই আছে। ২০০৮ সালে প্রচুর রক্তক্ষয়ের পর রাজতন্ত্র থেকে নির্বাচনী-গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা করে নেপাল।
তবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ১৫ বছরের কম সময়ে ১১টি সরকার এসেছে সে দেশে। কোনো সরকার গড়ে দুই বছর টিকছে না। এই সুযোগে রাজতন্ত্রের সমর্থকেরা দেশে আবার পুরোনো সামন্তীয় শাসক বংশকে ফিরিয়ে আনতে মিছিল-সমাবেশ করছে। এই দাবির সঙ্গে মানিয়ে চলতে গিয়ে এককালের মাওবাদী ও রাজতন্ত্রবিরোধী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সাবেক রাজা পৃথ্বিনারায়ণের জন্মদিনে এ বছর রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করলেন।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নির্বাচনী গণতন্ত্রের করুণ চিত্রের সঙ্গে এখানে পাশের অঞ্চলের কয়েকটি দেশের নজির আনা যায়। মিয়ানমারে চলতি বছর নির্বাচন আয়োজনের তোড়জোড় করছে সামরিক সরকার। থাইল্যান্ডে সম্প্রতি বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচন হলো।
মিয়ানমারে দুই বছর আগের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ীদের কেউ কারাগারে, কেউবা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জনরায়ের পরও সেখানে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে সরকার গড়তে দেওয়া হয়নি। তার নেত্রী অং সান সু চির হয়তো জীবন শেষ হবে কারাগারে।
অন্যদিকে থাইল্যান্ডে ৯ বছর পর নতুন নির্বাচন হলো। তবে সেখানে বেশি ভোট ও আসন পাওয়া দুই দল আদৌ সরকার গড়তে পারবে কি না, সেটা জেনারেলদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। এদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ৯০ বছরে সেখানে ২৮ দফা নির্বাচন হয়েছে এবং ১৮ দফা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেসব নির্বাচনের ফলকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করা হয়েছে। এবারও সে রকম কিছুর শঙ্কা আছে।
থাইল্যান্ড নিয়ে আলাপে পাশের দেশ কম্বোডিয়ার হুন সেনের কথাও স্মরণ করা যায়। সেখানে প্রায় ৪১ বছর ধরে তিনি প্রধানমন্ত্রী (চার বছর ছিলেন যৌথভাবে)। প্রায় একদলীয় একটি ব্যবস্থায় তিনি ষষ্ঠবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের মতো কম্বোডিয়ায়ও কয়েক মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে। তবে হুন সেন আগেই বলে রেখেছেন, ২০২৮ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় থাকতে চান এবং এরপর তাঁর ছেলে হুন মানেত এই পদে আসবেন। তাঁর ইচ্ছার মর্যাদা রাখতে প্রধান বিরোধী দলকে ইতিমধ্যে নির্বাচনের অনুপযুক্ত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আসন্ন নির্বাচনে সেখানে কী ঘটবে, সেটা বলা কঠিন কিছু নয়। মজার বিষয় হচ্ছে, হুন সেন তাঁর দলের নাম রেখেছেন ‘পিপলস পার্টি’।
পথ কী?
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং তার বিবিধ নমুনা দেখে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, এসব অঞ্চল কি গণতন্ত্রের অনুপযোগী? ঠিক কী ধরনের সামাজিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এটা সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার অনুর্বর জমিন হয়ে উঠল? এসব দেশে ঔপনিবেশিক ধাঁচের আমলাতন্ত্র কি দায়ী। এই আমলাতন্ত্র কর্তৃত্ববাদী শাসনের পাটাতন হিসেবে কাজ করছে?
অনির্বাচিত এই পেশাজীবীরা সচরাচর জনপ্রতিনিধিদের কাছে জবাবদিহি করতে বিরক্ত হন। বিকল্প হিসেবে একনায়ক তাঁদের জন্য সুবিধাজনক। জবাবদিহি ছাড়াই দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিষয়ে পছন্দমাফিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। তবে এই অঞ্চলে নির্বাচনী গণতন্ত্রের রুগ্ণ চেহারার আরও কিছু কারণ জানালেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজ।
লেখকের সঙ্গে ২৭ মে এক আনুষ্ঠানিক আলাপে আলী রীয়াজ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারে অবিকশিত। আবার রাষ্ট্রে নির্বাহী বিভাগ অতিরিক্ত ক্ষমতাবান। রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগে ভারসাম্য থাকলে কী হতে পারে, তার নজির পাকিস্তানের উচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক ভূমিকা। ভারতে কিছুদিন আগেও এ রকম ভারসাম্য ছিল। এখন তার ক্ষয় দেখা যাচ্ছে।
আলী রীয়াজ বলছিলেন, এই অঞ্চলে গণতন্ত্রের অকার্যকারিতার পেছনে নাগরিক সংগঠনগুলো হারিয়ে যাওয়া বা দুর্বল হওয়া বা অতিমাত্রায় দলীয় চরিত্র নেওয়াও বড় কারণ। এ রকম সংগঠন মাঠে সক্রিয় না থাকায় সমাজে নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহি নেই। ফলে কেবল নির্বাচনী-গণতন্ত্র সংকটে পড়েনি, অর্থনীতিতে কায়েম হয়েছে ‘কতিপয়তন্ত্র’, যাকে এখন স্বজনতোষণ পুঁজিতন্ত্র বলা হচ্ছে।
প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক পুঁজি দক্ষিণ এশিয়ার স্বজনতোষণধর্মী চলতি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখে না। কারণ, এমন অর্থনৈতিক মডেল সমাজকে অস্থির রাখছে। পুঁজিপতিদের কাছে অস্থির সমাজে বড় বিনিয়োগ বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
আর এভাবে দক্ষিণ এশিয়া কম গণতন্ত্র, কম বিনিয়োগ, কম কর্মসংস্থান এবং ব্যাপক ধন বৈষম্যের এক দুষ্টচক্রে পড়েছে। সবার অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া এই দুষ্টচক্র থেকে বেরোনোর পথ নেই।
News Courtesy:
https://www.prothomalo.com/opinion/column/heka0y3apl?fbclid=IwAR0zig4UnnJ_vIepGKuXB97yYJIu9lEI58HVrXFLYBtnVWugOgcMzJxP9Zw