ড. ইউনূসকে 'হয়রানির' কারণ কি?
বিশ্লেষকরা বলছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষোভের কারণ হতে পারে প্রায় ১৫ বছর আগে করা তার এক "কৌশলগত ভুল"। বাংলাদেশের প্রথম নোবেল বিজয়ী হিসেবে নিজ জনপ্রিয়তার উপর ভর করে, ড. ইউনূস ২০০৭ সালে 'নাগরিক শক্তি' নামে নিজের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। শীঘ্রই সাধারণ নির্বাচনের তদারকির জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সম্ভাব্য নেতা হিসেবে তাকে মনে করা হয়েছিল। যদিও তিনি শীঘ্রই ওই পরিকল্পনাটি পরিত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু, বিশেষজ্ঞদের মতে হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ (এখনও) এই ধারণায় আটকে আছে যে সুপরিচিত পশ্চিমাদের এই বন্ধুটি প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন।
কাতার-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরায় সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং দেশটির সবচেয়ে বিশিষ্ট বেসরকারি নাগরিক ড. ইউনূসের মধ্যকার তিক্ত সম্পর্কের বিষয়ে সবাই অবগত। সরকার কর্তৃক ড. ইউনূসকে 'হয়রানি'র কারণ অনুসন্ধানে আল জাজিরা বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ-বিশ্লেষকের সাথে কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দ্য উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, "অস্থির এক রাজনৈতিক সময়ে বর্ধিত সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে ইউনূসের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে ভুল পথে নিয়ে গেছে। ইউনূস এবং তার সমর্থকরা বলবেন, তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত, পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বাইরে গিয়ে তৃতীয় একটি পন্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতারা বিষয়টি সেভাবে দেখেননি।”
আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ইউনূসকে "অপমান ও দুর্নাম করা" নতুন কিছু নয় মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ আল জাজিরাকে বলেন, "২০১১ সাল থেকেই এটি চলে আসছে। কিন্তু এখন তাকে দিয়ে একটি উদাহরণ তৈরির জন্য এর মাত্রা বাড়ানো হয়েছে৷ এটা করা হচ্ছে এই বার্তা পৌঁছাতে যে, তার মতো মাপের কোনো ব্যক্তি যদি নির্যাতিত হতে পারেন তবে অন্যদেরও নিজেদের ব্যাপারে ভীত হওয়া উচিত।" প্রফেসর রীয়াজ বলছিলেন, 'ভুল ধারণা থেকে জন্ম নেওয়া ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে' ইউনূসকে ক্ষমতাসীন দল অপছন্দ করে।
সেটি হলোঃ বাংলাদেশের বৃহত্তম সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাতিলের নেপথ্যে তিনি ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা বাংলাদেশের সরকারগুলোর জন্য সাধারণ একটি বিষয় এবং কেউ যত বেশি সময় ক্ষমতায় থাকে, তার মধ্যে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা ততোই বেশি হয়।
তবে, শেখ হাসিনার প্রাক্তন বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ আল জাজিরাকে বলেন, "যখনই তিনি (ইউনূস) দেখতে পান যে নিজের মতো কিছু হচ্ছে না, তখনই প্রভাবশালী বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার এই অভ্যাস তার ছিল"। ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের সময় তার পক্ষে মধ্যস্থতা করার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে তিনি অনুরোধ করার ফলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে যায় বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়।
র্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা পলিসি নিয়েও আলোচনা করা হয় আল জাজিরার প্রতিবেদনে। এ বিষয়ে ঢাকা-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান আল জাজিরাকে বলেন, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের পলিটিকাল এলিটদের সঙ্গে ইউনূসের ভালো সম্পর্ক রয়েছে, তাই আওয়ামী লীগ সরকার মনে করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর নেপথ্যে তিনি রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না যে, হাসিনা ও তার দল পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাতিলের জন্য ইউনূসকে বারংবার অভিযুক্ত করেছে।
সাংবাদিক শায়ান এস খান বলেন, বাংলাদেশের শাসক দলগুলোর ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগের বছর "অশান্ত হওয়াটা" স্বাভাবিক বিষয়। ঢাকায় ইউনূসের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বসাতে চায় আমেরিকা- দেশের গুজবের কারখানাগুলো এমন সব গল্প ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। নির্বাচনের ইস্যুটি এখনও অমীমাংসিত। এর ফলে যথেষ্ট অনিশ্চয়তার জন্ম হয়েছে। নিজে বিভ্রান্তিকর অবস্থায় থাকার কারণে সরকার সম্ভবত ভিত্তিহীন দাবিটি দেখতে ব্যর্থ হয়েছে।
News Courtesy:
https://mzamin.com/news.php?news=73575&fbclid=IwAR3PrcFs3LK_-VwSSykM81i8Hne-1J_zbTH3KxHFKCGMF5CGhCmp7kjUaQM