ড. আলী রীয়াজ এখন কী দায়িত্ব পালন করছেন

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাজনৈতিক ও সংবিধান বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ড. আলী রীয়াজ। সুনির্দিষ্ট কোনও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে না থাকলেও রাজনৈতিক ও সংবিধান সম্পর্কিত পরামর্শ দেওয়াসহ প্রয়োজন সাপেক্ষে খুঁটিনাটি জটিল কাজে প্রধান উপদেষ্টাকে সহায়তা করছেন তিনি। সরকারে বড় কোনও পরিবর্তন না হলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার পাশে থেকে এভাবেই দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের একাধিক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তবে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আহমেদ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পদত্যাগ করলে আলী রীয়াজ এ দুটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর নিয়োগ পেয়ে অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ একজন পূর্ণ মন্ত্রী বা উপদেষ্টার পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই পদে থাকাকালীন উপদেষ্টার পদমর্যাদা, বেতন-ভাতাদি ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তিনি। একই পদমর্যাদায় নিয়োগ পাওয়া প্রধান উপদেষ্টার দুই বিশেষ সহকারীর একজন ড. আলী রীয়াজ। অপরজন ড. খলিলুর রহমান। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পোর্টফলিওতে ড. খলিলুর রহমানের মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ক্ষেত্রে ‘প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক’ উল্লেখ থাকলেও ড. আলী রীয়াজের ক্ষেত্রে শুধুই ‘প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী’ উল্লেখ রয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন এবং কমিশনের প্রধানদের নাম ঘোষণা করেন। ওই দিন তিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিকের নাম উল্লেখ করলেও পরবর্তীতে এই কমিশনের প্রধান হিসেবে তার পরিবর্তে ড. আলী রীয়াজের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আর সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্ব পালনকালে ড. আলী রীয়াজ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস মিটিং করেছেন। এই সময়ে তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভিন্ন সংকট ও সংবিধান সংশ্লিষ্ট নানা জটিলতা নিরসনে ফলপ্রসূ আলাপ আলোচনা করেছেন। এরই ফসল সংবিধান সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন সফলতার সঙ্গে রাষ্ট্র তথা প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দিয়েছেন, যা এখন রাষ্ট্রের সম্পত্তিও বটে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে ‘জুলাই সনদ’। এর মাধ্যমে ড. আলী রীয়াজ নিজেকে রাষ্ট্রের কাছে অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।
তারা মনে করেন, এমন একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের যেকোনও সংকটে কাজে লাগানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি প্রধান উপদেষ্টা। আগামী নির্বাচনে এবং নির্বাচনের আগে বা পরে যেকোনও রাজনৈতিক সংকটে সংবিধান হোক আর রাজনীতি হোক, উভয় ক্ষেত্রেই ড. আলী রীয়াজের পরামর্শ প্রয়োজন হতে পারে। কারণ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। এ কারণেই তাকে সরকারের অংশ হিসেবে নিজের কাছাকাছি যুক্ত রাখতে মন্ত্রী বা উপদেষ্টার পদমর্যাদায় বিশেষ সহকারী হিসেবে নিযুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুটি কমিশনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ড. আলী রীয়াজ অনেক বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতেই হয়তো তাকে সরকারের অংশ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়।‘
অপরদিকে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘ড. আলী রীয়াজ বর্তমান সরকারের আস্থাশীল একজন মানুষ। তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগাতেই কমিশনের দায়িত্ব পালন শেষে তাকে সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার দফতরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারীকে কোনও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আপাতত কোনও মন্ত্রণালয়ে তাকে যুক্ত করারও সম্ভাবনা নাই। এ ক্ষেত্রে তার যেসব বিষয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে সেসব বিষয়ে উপদেশ বা পরামর্শ নেবে সরকার।’
তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানামুখী জটিলতা বা সংকট সৃষ্টি হতে পারে, সে সময়ে ড. আলী রীয়াজ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে অনায়াসেই কথাবার্তা বলে সেসব জটিলতা নিরসন বা সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। এছাড়া কোনও কারণে সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টি হলেও তিনি সেখানে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে সরকারের ওপর মহল মনে করে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আলী রীয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে আমার যে বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে সেসব বিষয়ে তাকে উপদেশ দেওয়াই আমার কাজ।’ এর বেশি কিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, ড. আলী রীয়াজ একজন বাংলাদেশি-মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও লেখক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আলী রীয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র অনাবাসিক ফেলো ও আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের (এআইবিএস) প্রেসিডেন্ট। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। তার গবেষণার বিষয়গুলোর মধ্যে আছে গণতন্ত্র, সহিংস উগ্রবাদ, ধর্ম ও রাজনীতি, দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের রাজনীতি।

ড. আলী রীয়াজ এখন কী দায়িত্ব পালন করছেন
অধ্যাপক আলী রীয়াজ ওই নারীকে চেনেন না: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
Citizens’ vigilance key to resilient democracy

রাষ্ট্র একা সংকট সৃষ্টি করে না, বৈশ্বিক ব্যবস্থাও দায়ী
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ
গণঅভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণে আলী রীয়াজের নতুন বই

Ali Riaz’s new book explores country’s transition to democracy

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নতুন বই প্রকাশিত
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ জমা দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন
July charter proposals handed over to CA
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ বৈঠক হয়ে গেল, সুপারিশ দেবে মঙ্গলবার
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায়ের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা

Turning point in country’s politics
Clause 5 of July Charter revised to reflect demands of 'July Fighters': Ali Riaz
