শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে কী হতে চলেছে

শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে কী হতে চলেছে

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার নাটকীয় মোড় পরিবর্তন ঘটলেও সংকটের শেষ হয়নি, সমাধান এখনো অনেক দূর। উপরন্তু, এই সংকট এখন কার্যত সাংবিধানিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত। আর আছে রাজনীতির নেপথ্য কুশীলব সেনাবাহিনী। এদের ভূমিকার ওপর নির্ভর করছে পাকিস্তানের আগামী কয়েক দিনের রাজনীতি এবং আগামী বছরগুলোর রাজনীতির ইঙ্গিত তাতে স্পষ্ট হবে; বলতে গেলে যেটিই সব সময় হয়ে আসছে।
      
গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ যাঁরা লক্ষ করেছেন, তাঁরা জানেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ার মুখে গতকাল পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানান, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন। ৮ মার্চ বিরোধীরা এ অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল। এ নিয়ে যখন ভোট গ্রহণের কথা, সেই সময়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। ইতিমধ্যে বিরোধীরা সরকারি দলের এতজন সদস্যের সমর্থন জোগাড় করতে পেরেছে যে এটা নিশ্চিত ছিল, অনাস্থা প্রস্তাব পাস হবেই। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আগে একাধিকবার বলেছিলেন, পদত্যাগ করবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর ক্ষমতায় থাকার আর কোনো পথই ছিল না। তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে বিরোধী দলের আশু ক্ষমতায় যাওয়ার পথ বন্ধ করতে পেরেছেন বলেই মনে করছেন।

দেশের সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু সংসদ যেভাবে ভাঙা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। পার্লামেন্টে সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদের অজুহাত তুলে অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার আহ্বান জানান আইনমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী। সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদ না নির্বাচনবিষয়ক, না পার্লামেন্টবিষয়ক; এ অনুচ্ছেদ হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের আনুগত্য বজায় রাখা বিষয়ে। পার্লামেন্টে যে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে, তা ‘বিদেশি শক্তির প্ররোচনায়’ করা হয়েছে, ফলে এটা রাষ্ট্রবিরোধী এবং অবৈধ, এই বলে তথ্যমন্ত্রীর দেওয়া যুক্তি মেনে নিয়ে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন স্পিকার। বিরোধী দল এবং পাকিস্তানের সংবিধানবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পদক্ষেপ সংবিধানের বরখেলাপ। তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। ফলে, এখন প্রশ্নটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সংবিধানের ব্যাখ্যার বিষয়। এতে এ মুহূর্তে পাকিস্তান কেবল রাজনৈতিক সংকটের মুখেই নেই, ইমরান খানের নেওয়া পদক্ষেপ দেশকে বড় ধরনের সাংবিধানিক সংকটের মুখেই ফেলে দিয়েছে।

প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ইমরান খান এই আশা করছেন যে সংবিধানে যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রাখা হয়েছে, সেভাবেই দেশ অগ্রসর হবে, দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এত তিনি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। পাকিস্তানে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ব্যাপারে সংবিধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। ২২৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হলে বা ভেঙে দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতার ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। এই দুজন যদি তিন দিনের মধ্যে ঐকমত্যে না পৌঁছান, তবে তাঁরা প্রত্যেকে দুজন করে নাম পাঠাবেন পার্লামেন্ট বা সিনেটের আটজন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটির কাছে। এই কমিটি গঠন করবেন স্পিকার এবং সদস্য হবেন দুই দলের সমানসংখ্যক প্রতিনিধি। এই কমিটি যদি তিন দিনের মধ্যে একমত হতে ব্যর্থ হয়, তবে তারা এসব নাম নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়ে দেবে, কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং তা হতে হবে দুই দিনের মধ্যে। ফলে, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন আট দিন। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছে ৩ এপ্রিল, ইমরান খান ১১ এপ্রিলের পর আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। ইতিমধ্যেই একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা যদি না করা যায়, তবে কী হবে, সেটা কেউই জানে না। কিন্তু পাকিস্তানের ইতিহাস ইঙ্গিত দেয়, এ ধরনের পরিস্থিতি দেশে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ ক্ষমতা গ্রহণের পথ খুলে দেবে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী সব সময়ই একটা বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে, বেসামরিক শাসনের সময়ও তাঁদের প্রভাব থেকেছে অটুট।

ইতিমধ্যে ঘটনার আরেক মোড় ঘটতে পারে যদি আজ সোমবার দেশের সুপ্রিম কোর্ট সুয়োমোটোর শুনানি শেষে এই রায় দেন যে ডেপুটি স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা অসাংবিধানিক। এর অর্থ দাঁড়াবে, পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু যেহেতু ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন, সেহেতু আদালতের রায়ে এটাও বলতে হবে, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে না। নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে পাকিস্তানের উচ্চ আদালতের টানাপোড়েন বা পরস্পরের মুখোমুখি হওয়া নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু আজ তা আরেক দফা প্রত্যক্ষ করতে হবে কি না এবং তার পরিণতি কী হবে, সেটা দেখার বিষয়। কিন্তু এটা ঠিক যে যেভাবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তার সাংবিধানিকতার পক্ষে রায় দিতে হলে সুপ্রিম কোর্টকে বেশ কসরত করতে হবে। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট পাকিস্তানের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর প্রভাবের বাইরে নন, কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে আদালতের পিটিআইয়ের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। সেটা করলে সুপ্রিম কোর্টের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। তারপরও গতকাল প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে এই ইঙ্গিত স্পষ্ট যে আদালত এ পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন না।

আগামী কয়েক দিন পাকিস্তান একটি সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলা করবে, দেশে অস্থিশীলতা ও সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে; বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে তাঁদের হাতে দেশের শাসনভার অর্পিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ সংকটে সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যে ভূমিকা রাখছে, তাতে পরবর্তী সরকারের ওপরে তাদের প্রভাব আরও বাড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সহযোগিতা কত দিন থাকবে, দুই বছর বা তার আগে যে নির্বাচন, সেখানে সেনাবাহিনী কী ভূমিকা নেবে।
পার্লামেন্ট যদি ফিরে আসে, তবে সাময়িকভাবে—তা কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও—ইমরান খানই প্রধানমন্ত্রী হবেন, তাঁকে অনাস্থা প্রস্তাব মোকাবিলা করতে হবে। তিনি তা কীভাবে করবেন? নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইমরান খানের দলের শীর্ষ নেতাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, পার্লামেন্ট বহাল করা হলে সরকারবিরোধীদের কাউকে কাউকে আটক করা হতে পারে। অজুহাত হিসেবে সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদ বরখেলাপের অভিযোগ আনা হবে। কিছুদিন যাবৎ ইমরান খান অভিযোগ করে আসছেন, বিদেশি শক্তি তাঁর সরকারের পতন চায়। তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এর পেছনে আছে। কারণ, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে তাঁর সখ্য এবং ইউক্রেন প্রশ্নে জাতিসংঘে পাকিস্তানের ভোট। যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে তাঁর কাছে চিঠি আছে বলে দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হিসেবে তিনি যা হাজির করেছেন, তা আসলে কোনো ধরনের ‘ষড়যন্ত্র’ বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে না। কিন্তু একে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তিনি এবং তাঁর দল পিছপা হয়নি। এ কারণে বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা ও আটকের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেওয়া যাচ্ছে না। এতে অনাস্থা প্রস্তাব না ঠেকানো গেলেও রাজপথে উত্তেজনা সৃষ্টি করা যাবে, সহিংসতার সূচনা হবে। 

এ ধরনের অস্থিশীলতাকে কাজে লাগানোর ইতিহাস পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর আছে। বিরোধীদের ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়ে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় আনার আগ্রহ ইমরান খানের আছে কি না, সেটাই নির্ধারণ করবে, তিনি কী করেন।

যদিও সেনাবাহিনী বলছে যে এই সংকটে নিরপেক্ষই আছে, কিন্তু এ কথা বিস্মৃত হওয়ার কোনো কারণ নেই যে ২০১৮ সালে পাকিস্তানের ক্ষমতায় ইমরান খানের উত্থানের পেছনে সেনাবাহিনীই কলকাঠি নেড়েছিল। পাকিস্তানের যেকোনো শাসককে সেনাবাহিনীকে তুষ্ট করতেই হয়। কিন্তু ইমরান খানের এই পৃষ্ঠপোষকেরা যে এখন তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট নয়, সেটা স্পষ্ট। গত বছর সেনাপ্রধান নিয়োগ নিয়েই টানাপোড়েনের সূচনা। এখন তা খোলামেলা ব্যাপার, কেননা এই সংকটে সেনাবাহিনী তাঁর পক্ষে অবস্থান নেয়নি।

পাকিস্তানের রাজনীতির সম্ভাব্য দুটি চিত্র সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করলেও সেনাবাহিনী এই মুহূর্তে আদৌ ক্ষমতা গ্রহণে আগ্রহী হবে বলে মনে হয় না। প্রথম কারণ হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। বেহাল অর্থনীতির কারণে যে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতেই বিরোধী দলগুলো অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। এ অবস্থার পেছনে বহুবিধ কারণ আছে এবং তা খুব সহজেই সমাধান করা যাবে না। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ ধরনের অবস্থায় ক্ষমতা দখল করলে তাকে এর দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। তাদের পক্ষে সেটা সম্ভব হবে না। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে দেশের পররাষ্ট্রনীতি। ইমরান খানের অনুসৃত দৃশ্যত মার্কিন ও পশ্চিমা বিরোধিতার কারণে তাঁকে চাপে পড়তে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো ইমরান খানের অবস্থানকে ইতিবাচক ভাবে দেখছে না—এটা বোঝাই যায়। সেনাবাহিনীর অবস্থান যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, সেটা সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া গত শনিবার ইসলামাবাদে নিরাপত্তাবিষয়ক একটি সংলাপে বলেছেন। কিন্তু সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করলে তাঁর প্রতি পশ্চিমা সমর্থন থাকবে, এমন নয়; বিশেষত জো বাইডেন যেখানে ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসনকে ‘গণতন্ত্রের সঙ্গে কর্তৃত্ববাদের লড়াই’ বলে বর্ণনা করেছেন। এ কারণে সেনাবাহিনীর জন্য এটি একধরনের সমস্যা তৈরি করবে। আপাতত পাকিস্তানের অতীত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম।

আগামী কয়েক দিন পাকিস্তান একটি সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলা করবে, দেশে অস্থিশীলতা ও সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে; বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে তাঁদের হাতে দেশের শাসনভার অর্পিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ সংকটে সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যে ভূমিকা রাখছে, তাতে পরবর্তী সরকারের ওপরে তাদের প্রভাব আরও বাড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সহযোগিতা কত দিন থাকবে, দুই বছর বা তার আগে যে নির্বাচন, সেখানে সেনাবাহিনী কী ভূমিকা নেবে। 

আলী রীয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট

News Courtesy:

https://www.prothomalo.com/opinion/column/%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%80-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87?fbclid=IwAR1-xRmJLXJNUWzRBK_JQGX9z-02jNi9fAh3xPVun8nAVeOp3JMqRLyucUk

An unhandled error has occurred. Reload 🗙